দুঃখ ঘুচতেই যুগ পার
এক যুগ আগে রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ভেতরে সড়ক নির্মাণ করেছিল রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় কয়েক বছরের মাথায় সড়কটি খানাখন্দে ভরে যায়। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যদিও সেই সড়ক দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে উত্তরাঞ্চলগামী বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন বলছে, এ সড়কে চলাচলকারীদের দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে এবার। আধুনিক হচ্ছে ভাঙাচোরা সড়কটি।
নগরীর গ্রেটার রোডের ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে সড়কটি যুক্ত হয়েছে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এলাকার বাইপাস সড়কে। পদ্মা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল মূলত নগরীর ভেতরে যানবাহনের চাপ কমাতে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) জানায়, তারা কেবল সড়ক নির্মাণ করে। রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ তাদের নেই। সড়কটি দেখভাল করার কথা ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক)। কিন্তু এক দশকেও সেদিকে দৃষ্টি দেয়নি নগর কর্তৃপক্ষ। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায় সড়কটির বেহাল দশা। সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বর্ষায় কাদাপানিতে একাকার। এর ভেতরেই দুর্ঘটনা সঙ্গে করে চলছে যানবাহন। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তাটিতে রিকশা-অটোরিকশা যেতে চায় না। যারা যেতে চান, তারা বাড়তি ভাড়া চেয়ে বসেন। সোজা পথ বাদ দিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যেতে হয়। তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
পাঁচ বছর ধরে রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুরু থেকেই দেখছি রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সড়কে চলতে গিয়ে দিনে অন্তত ২-৩টি গাড়ি নষ্ট হয়। মাঝেমধ্যেই গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, চাকা নষ্ট হচ্ছে।
এ চালক আরও বলেন, দুর্ভোগ কমাতে একসময় চালকরা মিলে রাবিশ ফেলার উদ্যোগ নেই। কিন্তু তাতে বাধা দেয় রাসিক। রাস্তাটি তারা নিজেরাও মেরামত করেনি। আমরা ওই সময় খানাখন্দগুলো সমান করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা সেটিও করেনি।
একই অভিজ্ঞতা সড়কটিতে চলাচলকারী আরেক বাসচালক সাজেদুর রহমান মিলনের। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মেরামত না করায় রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গেছে। এই সড়কে যানবাহন ঠিকমতো চালানো যায় না। প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। নওদাপাড়া টার্মিনালের অবস্থায়ও খারাপ। এ দিকে নজর দেওয়া দরকার।
কেবল যাত্রীবাহী বাসই নয়, সড়কে চলাচলকারী অন্য যানবাহনের চালকদেরও নিত্যদিনের সঙ্গী ভোগান্তি। এ বিষয়ে ভটভটিচালক সম্রাট ইসলাম বলেন, একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের এই সমস্যা সমাধান করার কেউ নেই। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
তবে শিগগিরই এ দুর্ভোগ কেটে যাবে বলে জানিয়েছে আরডিএ। সংস্থাটি জানায়, ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর তারা রাস্তাটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাসিকের কাছে হস্তান্তর করেছে। আট মাস পর ৩ আগস্ট রাসিক রাস্তাটির সীমানা চিহ্নিত করতে সার্ভেয়ার চেয়েছিল। সেটিও দেওয়া হয়েছে। এখন তারা রাস্তাটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নূর ইসলাম। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রাস্তায় কিছু গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। সেগুলো সরানো হলে দ্রুতই শুরু হবে রাস্তার কাজ।
তিনি বলেন, এর ব্যয় ৫৫ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ফুটপাতের জন্য ব্যয় ধরা হবে আরও ১৪ কোটি টাকা। আরডিএ এর অধিগ্রহণ করা ৮০ ফুট জায়গা রয়েছে রাস্তার। পুরো জায়গার দুই পাশে ৬ ফুট করে ১২ ফুট থাকবে ফুটপাত। দশ ফুট থাকবে সাইকেলের লেন। যা কার্ফ দিয়ে আলাদা করা থাকবে। ২২ ফুট করে দুই পাশে ৪৪ ফুটের চার লেনের রাস্তা হবে।
রাস্তাটি দীর্ঘ দিন পড়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাস্তাটি মেরামতে অনেক টাকার দরকার। সেই টাকা সিটি করপোরেশনের ছিল না। আমরা জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরে অবশ্য একটি বড় প্রকল্পের ভেতরে রাস্তাটি আনা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের জুনে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণ করে আরডিএ। দুই লেনের সড়কটি নির্মাণে ওই সময় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা। এর একটি বড় অংশ ব্যয় হয় ভূমি অধিগ্রহণে। তবে পরিকল্পিত উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন। তিনি বলেন, নগরীতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু তা পরিকল্পনাহীন। যে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, সে মানের কাজ হতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ না হলে সুফল বঞ্চিত হবে জনগণ।
প্রসঙ্গত, নগরীর নওদাপাড়ায় ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। নগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রীসেবা বৃদ্ধিতে ৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এ টার্মিনাল গড়ে তোলে আরডিএ। ৭ দশমিক ৪১ একর জায়গায় গড়ে ওঠা এ টার্মিনালে এক সঙ্গে প্রায় ৫০০টি বাস দাঁড়াতে পারবে। নগরী থেকে চার কিলোমিটার দূরের এ টার্মিনালটি এখন গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নগরীর শিরোইলে পুরোনো টার্মিনালসহ আশপাশের রাস্তায় থাকছে বাস। ফলে নগরজুড়ে দুর্ভোগ রয়েই যাচ্ছে।
আরআই/এসপি