এক রাতের টানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরী পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, অলিগলি, বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ব্যস্ততম সড়ক ও নিম্নাঞ্চলে হাঁটু পানি জমেছে। 

আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ২৬৫ মিলিমিটার। শুধু রাতের ৭ ঘণ্টায় জেলায় ২২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। যা ছিল ১০০ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত।

দুদিন ধরে রংপুরে অব্যাহত বৃষ্টিতে তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। আর রংপুর নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থইথই। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানি। শহরের জুম্মাপাড়া, আদর্শপাড়া, কামারপাড়া, বাবুখাঁ, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, মুলাটোল, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, খলিফাপাড়া, নগর মীরগঞ্জ, হোসেন বাজার, সর্দারপাড়া, মাষ্টারপাড়া, ঈদগাহপাড়াসহ অন্তত ৫০টির মতো পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এতে ওই সব এলাকায় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনও কিছু কিছু এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে।

রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি উঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। অনেক রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। নগরবাসীর অভিযোগ, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১৬ কিলোমিটারের শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল ঠিকমতো ড্রেজিং না করাসহ অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

নগরীর সেনপাড়া এলাকার মেজবাহুল মোকাররবিন জানান, রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন শ্যামা সুন্দরী এখন পানিতে টইটুম্বর। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশপাশেও।

নগরীর বাবুঁখা এলাকার আহসান হাবিব মিলন জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য এখনও পর্যাপ্ত ড্রেন তৈরি হয়নি। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট খালগুলো ভরাট আর দখলদারিত্বের কবলে পড়ায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির আশপাশসহ নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এরকম বৃষ্টি তো গত বছরও হয়েছিল। তবে গত বছরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ক্যানেল পরিষ্কার থাকায়  পানি নেমে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় পানি উঠেছে তা নিচু এলাকা। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছি পানিবন্দি মানুষজনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য।

মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিনে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবার মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি