সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ‘ম্যানগ্রোভ’ বা শ্বাসমূলীয় বন। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ। আর এ কথা ভাবতেই হিম ধরে যায় শরীরে। করোনা মহামারির প্রভাবে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল সুন্দরবন। তবে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের ভেতর পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় একটি স্থান কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে বিধ্বস্ত ও নিষ্প্রাণ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের এ পর্যটন এলাকাটি। 

দর্শনার্থীরা বলছেন, এখানে দেখার কিছুই নেই। রয়েছে তিনটি হরিণ ও একটি বানর। তাছাড়া সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য নির্মাণ করা কাঠের সড়কটি একেবারেই বিধ্বস্ত। 

দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি মানুষ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ছুটছেন সুন্দরবনে। তবে সুন্দরবনের ভেতর কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের দাবি এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের। বনবিভাগ বলছে, শিগগিরই বিধ্বস্ত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। 

রোববার (৩ অক্টোবর) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ জন তরুণ সুন্দরবনের কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রটিতে ঘুরতে যান। তবে হতাশ হয়ে ফিরেছেন তারা।

শ্রীউলা ইউনিয়নের মহিষকুড় গ্রামের দর্শনার্থী আবু জাফর বলেন, সুন্দরবনের এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে আমি আগেও এসেছি। তখন অনেক সুন্দর ছিল। পর্যটন কেন্দ্রটিতে চলাফেরা করার জন্য কাঠের নির্মিত পাটাতনটি ভেঙে গেছে। সেটির প্রবেশ মুখে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দেখার মতো কোনো জায়গা নেই এখানে। 

আশাশুনি সদর এলাকার বাসিন্দা কুদ্দুস আলীর ছেলে আহসান হাবিব। সুন্দরবন দেখতে কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে একটি দল নিয়ে যান এই দর্শনার্থী। তিনি বলেন, একটা ব্রিজ রয়েছে। সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ ও চলাচলের অনুপযোগী। এখানে কয়েকটা বানর ও তিনটা হরিণ ছাড়া দেখার মতো কিছুই নেই। একেবারেই নিষ্প্রাণ ও বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে জায়গাটি। সংশ্লিষ্টদের কাছে ট্যুরিজম কেন্দ্রটির অবকাঠামো সুন্দর ও দর্শনীয় করার দাবি জানাচ্ছি।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কর্মকর্তা আবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরপর কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটির কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে গেছে। কাঠের যে সড়কটি ছিল সেটিও একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। করোনার কারণে দীর্ঘ দিন সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ছিল। ফলে অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ করতে দেরি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাঠের সড়কটির পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক তৈরির কাজ শেষ হবে। তখন পর্যটকরা সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটিতে ওয়াচ টাওয়ারের পাশের পুকুরটিতে কুমির প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। এ ছাড়া হরিণের জন্যও একটি ঘর তৈরি করা হবে এবং সেখানে কিছু হরিণ রেখে লালন-পালন করা হবে যেন পর্যটকরা এসে কিছু হরিণ দেখতে পান। 

করোনা মহামারির কারণে ঘরবন্দি মানুষ যখন কিছুটা মুক্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময়ে সুন্দরবনের এমন বেহাল দশায় দর্শনার্থীরা কিছুটা হতাশ। সে কারণে তারা চান যেন খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হয়। এতে করে দর্শনার্থীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে সরকারের রাজস্ব।

আকরামুল ইসলাম/আরআই/এসপি