৩০ মিনিটের পথ পার হতে লাগছে ১২ ঘণ্টা
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। মধ্যরাত থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়।
৩০ মিনিটের নৌপথ পারাপারে সময় লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। নৌপথ পারাপার হতে আসা যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে বাসের সারি। চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লেগেছে যানজট।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চের প্রায় ২১ জেলার যাত্রী ও যানবাহনের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। এই পথে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাড়ে সাত হাজার যানবাহন এবং হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হয়। যাত্রী ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী পার হয়।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট থেকে শিবালয় উপজেলার আড়পাড়া এলাকা পর্যন্ত বাসের দীর্ঘ সারি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দুটি ট্রাক টার্মিনালে সাড়ে তিনশ পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। তবে জরুরি পণ্যবোঝাই ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও পচনশীল দ্রব্য বহনকারী যানবাহন আগে পার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
যানজটে ভোগান্তির বিষয়ে পাটুরিয়ামুখী যাত্রী রিংকি আক্তার বলেন, শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এসেছি। ১০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর এখন পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছালাম। নদী পার হতে আরও কত সময় অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহ ভালো জানেন। আমাদের ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
যানজটে বসে থাকা হানিফ পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিয়ে এই নৌপথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বছরের প্রায় সময়ই এখানে কোনো না কোনো সমস্যা লেগে থাকে। ঘাট এলাকায় নারী ও শিশুদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়। কারণ ফেরিঘাটের পরিবেশ নাজুক। পরুষরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারলেও নারী-শিশুদের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দুই-একটা শৌচাগার থাকলেও তা অনিরাপদ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। ঘাট কর্তৃপক্ষের কাছে নারী-শিশুর জন্য মানসম্মত শৌচাগার নির্মাণের দাবি জানাই।
চুয়াডাঙ্গা পরিবহনের চালক বসির বলেন, রাতে সাড়ে ৪টায় পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এসেছি। ফেরি বন্ধ থাকায় নৌপথ পারাপারের সুযোগ হয়নি। তীব্র শীত আর কুয়াশায় সারারাত খুব কষ্টে কাটিয়েছি। বাসের যাত্রীরা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। সড়কে সারারাত বাসের মধ্যে থাকাটাও অনেক কষ্টের।
ফেরিতে উঠার অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক আওলাদ হোসেন বলেন, আমাগো কপাল খারাপ। গাড়ি নিয়ে যাব খুলনায়। দুদিন আগে ছিলাম উথুলী সংযোগ সড়কে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে গাড়ি নিয়ে আসলাম। রাতে ফেরি বন্ধ থাকে। দিনের বেলায় বাস ও প্রাইভেটের চাপ। কখন নদী পার হব; এখনও ফেরির টিকিট পাইনি।
ট্রাকচালক সুমন হোসেন বলেন, ভাই দুদিন ধরে ঘাটে বসে আছি। মালিকের গাড়ি চালিয়ে যা আয় হয় তার সিংহভাগ সড়ক আর ফেরিঘাটে খরচ হয়ে যায়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন। কি করব বুঝতে পারছি না।
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের বাড়তি চাপ আর যাত্রী ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন ধরে রাতে কুয়াশা পড়ছে। নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় ফেরির দিক-নির্দেশনামূলক বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন মাঝপদ্মায় ৩-৫ ফেরি দুর্ঘটনা এড়াতে নৌঙর করে। ফলে প্রতি রাতেই ৮-১০ ঘণ্টা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়ায় যানবাহনের সারি দীর্ঘ হয়েছে। তবে নৌপথে ফেরি চলাচল শুরুর পর থেকে তালিকা অনুযায়ী অপেক্ষমাণ যানবাহন নদী পার হয়। সবশেষ পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় সহস্রাধিক যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান জিডিএম জিল্লুর রহমান।
এএম