‘আমগো জীবন শ্যাষ, কোনোরকম সংসার চালাই। জায়গা-জমি বেচি ছেলেরে বিদাশ দিছি। আইজ ৮ বছর অইছে। অনও চালানও উডাইতে হারিনো (এখনও খরচ তুলতে পারিনি)। অন আর ছেলেই শ্যাষ। কেমনে সংসার চালামু, কেমনে কিরমু (কী করবো)। কান্না ছাড়া আঙ্গো (আমাদের) আর কোনো উপায় নাই। আঙ্গো সব শ্যাষ অই গেছে।’ 

ঘূর্ণিঝড়ে ওমানে ছেলে আমজাদ হোসেন হৃদয়ের মৃত্যুতে সব হারিয়ে এভাবেই হাহাকার করছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধ বাবা আবদুস শহিদ। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুতে এখন তিনি দিশেহারা। 

গত রোববার ওমানে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় শাহিন। এতে তিন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। নিহত তিনজনই লক্ষ্মীপুর জেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের। আমজাদ হোসেন হৃদয় ছাড়া নিহত বাকি দুজন হলেন- শামছুল ইসলাম ও জিল্লাল হোসেন। শামছুল ইসলাম ও জিল্লাল সম্পর্কে চাচাতো ভাই। 

শামছুল ইসলাম ৩০ বছর ধরে ওমানে চাকরি করছিলেন। পরিবারে তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। জিল্লাল ১৫ বছর ওমানে রয়েছেন। তার পরিবারে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। হৃদয় ৮ বছর আগে ওমানে চাকরি করতে যান। এরা তিনজনই একটি খেজুর বাগানে কাজ করতেন।

নিহত হৃদয়, শামছুল ও জিল্লাল

হৃদয়ের স্বজনরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, হৃদয়রা যেখানে থাকতেন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে তীব্র বৃষ্টিপাতের পর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। এরসঙ্গে তীব্র বাতাসে সেখান প্রায় দশ মিটার উঁচু ঢেউ তৈরি হয়। এই পানির স্রোতে ভেসে যান হৃদয়সহ তিনজন। পরে স্থানীয়ভাবে খোঁজাখুঁজির পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশের সন্ধান মেলে। 

নিহত হৃদয়ের বাবা আবদুস শহিদ জানান, শামছুল ইসলাম ও জিল্লালের মরদেহ মঙ্গলবার সকালে ওমান পুলিশ উদ্ধার করে। বুধবার বিকেলে তার ছেলে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, নিহতরা তাদের পরিবারের উপার্জনের ভরসা ছিলেন। তাদের মৃত্যুর খবর দুঃখজনক। নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মরদেহ দেশে আনার জন্য চেষ্টা চলছে। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, পরিবার ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিহতদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। নিহতদের পরিবারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএফ