ড্রাগন ফলচাষি খোরশেদ আলম

শখের বসে ড্রাগন চাষ করে বাণিজ্যিক চাষাবাদের স্বপ্ন দেখছেন খোরশেদ আলম নামের এক ড্রাগন ফলচাষি। তিনি কুড়িগ্রাম পৌরশহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী দবির উদ্দিনের ছেলে। বাবার ব্যবসার পাশাপাশি ইউটিউবে ড্রাগন চাষ পদ্ধতি দেখে উদ্যোগ নেন ড্রাগন চাষ করার। পরে দীর্ঘ প্রতিক্ষা আর চেষ্টায় আজ ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

ড্রাগনচাষি খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে শখের বসে বাসার ছাদে একটি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন তিনি। পরবর্তীতে জমিতে আবারও ৩০টি ড্রাগনের চারা রোপণ করেন। পরে আস্তে আস্তে তিনি নিজের ৫০ শতক জমিতে ২ হাজারের মতো ড্রাগন ফলের গাছের বাগান করেন।

প্রতিটি চারাগাছে ১০০ টাকা খরচে সব মিলে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তার ২ লাখ টাকা। দীর্ঘ মেয়াদি এ প্রজেক্ট থেকে এখন পর্যন্ত লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। খোরশেদ আলমের ড্রাগন চাষ দেখে কুড়িগ্রামে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষে এগিয়ে আসছেন অনেকেই।

৫০ শতক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান খোরশেদের

ড্রাগনচাষি খোরশেদ আলম বলেন, ড্রাগন ফল দীর্ঘমেয়াদি আবাদ। এটি একটি লাভজনক চাষাবাদ। প্রথমে একটু খরচ হলেও পরবর্তীতে খরচ তেমন নেই। অনান্য আবাদে যেমন সবসময় গাছের যত্ন, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়, সেদিক থেকে ড্রাগন চাষাবাদ খুবই ভালো। সামান্য পরিচর্যা করতে পারলে ড্রাগন ফল চাষ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে ইউটিউব থেকে ড্রাগন ফল চাষে দেখে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে একটি গাছ লাগাই। তারপর ৩০টি গাছ এনে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু করি। ৩ বছরে আমার ৫০ শতক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান। এখানে গাছের সংখ্যা ২ হাজারের মতো। এ পর্যন্ত ৩০০ টাকা কেজি দরে প্রায় লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি।

পরিচর্যায় নিয়োজিত উমর ফারুক বলেন, ড্রাগন চাষে তেমন কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। ফুল আসার এক মাসের মধ্যে ফল ধরে। এখানে তিন জাতের ড্রাগন ফলের গাছ আছে। এখানে চায়না ও ভিয়েতনাম পদ্ধতিতে ড্রাগনের গাছের চারা লাগানো হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সদর উপজেলায় ৪টির মতো ড্রাগন ফলের বাগান আছে। ৩-৪শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন ফল। তবে কুড়িগ্রামের মানুষ ড্রাগন ফলের ওপর বেশি অভ্যস্ত না। কিন্তু দেশের অন্য জেলায় এর চাহিদা ব্যাপক রয়েছে।

কুড়িগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, কুড়িগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে অল্প পরিসরে ড্রাগন ফল চাষাবাদ হচ্ছে। এখনো ফুল ফ্রুটিংয়ে যায়নি। কেননা ড্রাগন গাছের বয়স চার বছর না হলে সেটা থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল পাওয়া যায় না। বিদেশে চাষ হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ড্রাগনের চাষাবাদ হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক, বিশেষ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে এটি খেলে তা দূর হয়। এছাড়া ড্রাগন ফল খেলে মানুষের হাড় শক্তিশালী হয়, হার্টের কোনো রোগ থাকলে আস্তে আস্তে নিরাময় হয়। তাছাড়াও চুল পড়া বন্ধ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে এ ফল।

জুয়েল রানা/এমএসআর