বাবা ছিলেন কৃষক। আলা উদ্দিনের সে পথেই যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের কথায় তাকে যোগ দিতে হয় শিক্ষকতায়। কিন্তু মন টেকেনি, ফেরেন নিজের সিদ্ধান্তে। তাই পরিবার পাশে না থাকলেও চার বছর আগে ঢাকায় শিক্ষকতা ছেড়ে গ্রামে ফিরে ১৩০ শতাংশ জমিতে মাল্টা চাষের মধ্যে দিয়ে শুরু করেন কৃষিকাজ।

আলা উদ্দিনের বয়স এখন ৬০। শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার ইদুলপুর ইউনিয়নের মাইচ্ছাখালী গ্রামের ছেলে তিনি। একেক মৌসুমে তিনি লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করছেন।   

আলা উদ্দিনের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ছোট বড় অসংখ্য মাল্টা। একেকটি গাছে ৩০ থেকে ৫০টির ওপর মাল্টা রয়েছে। পুরো জমির আশপাশে ১৫০টি লেবু গাছ, ১১টি ভিয়েতনামের নারিকেল গাছ, পরীক্ষামূলক ৩০টি বস্তায় আদা চারা ও বেশ কয়েকটি ড্রাগনের চারা লাগানো রয়েছে। বাগানে কাজ করছেন তিন যুবক। 

বাজারে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে মাল্টা।

আলা উদ্দিন বলেন, পড়াশোনা শেষ করে চেয়েছিলাম বাবার মতো একজন কৃষক হবো। তবে পরিবার রাজি ছিল না। তাই ঢাকায় গিয়ে জিন্দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। ভালো লাগেনি। তাই গ্রামে ফিরে আসার চেষ্টা করি। চার বছর আগে এই জমিতে ৪০টি চারা দিয়ে শুরু করি মাল্টা চাষ। জায়গা খালি থাকায় বুনে দেই বাদাম চারা। এতে করে কিছুটা প্রভাব পড়ে মাল্টাতে। তাই বাদাম উঠিয়ে ফেলি। পরে পুরো জায়গায় আরও ২০০ মাল্টা গাছ লাগায়। প্রথম বছর অনেক রোগ-বালাই ছিল বাগানে। পরে মাদারীপুর হটি কালচারে যোগাযোগ করলে তারা সমাধান দেয়ন। সে বছর লাভ না হলেও পরের বছর থেকে লাভবান হই।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই একজন শিক্ষিত আধুনিক চাষি হতে। চাই এই পেশা নিয়ে এগিয়ে যেতে। আমাকে দেখে বেকার শিক্ষিত যুবক চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক চাষি হোক। প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ মণ মাল্টা বাজারে বিক্রি করতে পারি এই বাগান থেকে।

জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় একজন বলেন, শিক্ষকতা ছেড়ে আলা উদ্দিন মাল্টা চাষ শুরু করেন। প্রথমে লাভবান না হলেও এখন তিনি লাভবান। বাজারে যে মাল্টা রয়েছে তা কাটলে ভেতরে হলুদ হয়। এই বাগানের মাল্টা বাজারে গিয়ে বিক্রির প্রয়োজন হয় না। এখান থেকে কিনে নিয়ে যায় লোক জন। বাজারের মাল্টা টক হয় কিন্তু এ বাগানের মাল্টা মধুর মতো মিষ্টি হয়।

স্থানীয় দোকানদার হাকিম আলীও সুনাম করেন এই বাগানের মাল্টার। আলা উদ্দিনের মতো মানুষদের সরকারের উদ্বুদ্ধ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।  

ইদুলপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রিজিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি কোনো সুযোগ আমরা তাকে দিতে পারি না। তার ফলনও অনেক ভালো। বাজারের যেই মাল্টা আমরা কিনি তার দামও বেশি আবার টকও লাগে। কিন্তু তার মাল্টা টক না, মিষ্টি। দেখতেও সুন্দর। তিনি তার জমিতে মাল্টা ছাড়াও লেবু, নারিকেল, বাদামসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশি মাল্টার চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আলা উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন এই মাল্টার চাষ করছেন।  

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএফ