উৎপাদন খরচ ছাড়াই এক বস্তা (৫০ কেজি) আলু জমি থেকে হিমাগারে পৌঁছাতে কৃষকের খরচ হয়েছে ৩১০ টাকা। অথচ এখন হিমাগারগুলোতে প্রতি বস্তা আলু ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচতো দূরের কথা হিমাগারগুলোতে আলু আনা এবং স্টোর ভাড়ার খরচই উঠছে না কৃষকদের। অনেকে দাম কম হওয়ায় হিমাগারে রক্ষিত তাদের আলুর খোঁজই নিচ্ছেন না। 

এখনো মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে ৮০ ভাগ আলু অবিক্রিত রয়ে গেছে। অথচ নতুন আলু উৎপাদনের সময় এসে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে হিমাগারগুলো খালি করে নতুন আলু সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বিক্রি না হলে হিমাগার মালিকদের এ সব আলু শ্রমিক নিয়ে বের করে ফেলে দিতে হবে। কৃষক আলু বিক্রি করতে না আসলে হিমাগার মালিকরা একদিকে হিমাগার ভাড়ার টাকা পাবেন না অন্যদিকে বাড়তি শ্রমিক নিয়ে টাকা খরচ করে হিমাগারের আলু বাইরে ফেলতে হবে। এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে এ বছর ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ টন আলু। এর মধ্যে কৃষকরা সাড়ে ৫ লাখ টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন।

বর্তমানে হিমাগারে আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজি দরে। অথচ আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ মিলে কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ১৮-২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে কেজি প্রতি চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে পার্থক্য ১২-১৪ টাকা। মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কম্বাইন কোল্ড স্টোরের সুপাইভাইজার মো. ফরিদ আহম্মেদ বলেন, তাদের হিমাগারে আলু ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা। এ পর্যন্ত আলু বিক্রি হয়েছে মাত্র ২১ হাজার বস্তা। অবশিষ্ট আলু এখনো হিমাগারে রয়েছে।

ইউনুস কোল্ড স্টোরের আলুর পাইকার ফারুক খান বলেন, মুন্সিগঞ্জে হিমাগারে রক্ষিত আলুর মাত্র ১৫ ভাগ বিক্রি হয়েছে। যদি সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে হিমাগারে রক্ষিত এই বিপুল সংখ্যক আলু বিক্রি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এগুলো হিমাগার মালিকদের শ্রমিক দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে হবে।

শিলিমপুর হিমাগারের আলু পাইকার ও কৃষক মো. রাজু বেপারী বলেন, হিমাগারে এক বস্তা আলু জমি থেকে আনতে প্রায় ৫০ টাকা গাড়ি ভাড়া লাগে। একটি খালি বস্তার দাম ৫০ টাকা, হিমাগার ভাড়া ২০০ টাকা অন্যান্য খরচ আরও ১০/২০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা প্রতি বস্তায় উৎপাদন খরচ ছাড়াই হিমাগারে আলু রাখতে খরচ হয়। আর বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বস্তা। সরকার গত বছর আলুর কেজি ৩৫ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। আজকে আমাদের দুরাবস্থা, সরকার কেন আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আমরা যদি আলু বিক্রি করতে না পারি তবে আগামী বছর কেমনে আলু চাষ করব। 

কৃষক শাহ আলম বলেন, এতো লোকসান হলে আমরা কৃষকরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাব। ঋণ করে আলু চাষ করেছি, এখন ঋণের টাকা কোথা থেকে দিব। 

শিলিমপুর কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার মমিনুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। তারপরেও স্টোর খোলার প্রথম দিকে কয়েকদিন ভালো দামেই আলু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করে প্রতি বস্তায় আলুর দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কমে গেছে। বিভিন্ন হিমাগারগুলো কৃষকদের আলু রাখার শর্তে ঋণ দিয়েছে। ঋণ এবং ভাড়া নিয়ে প্রতি বস্তা আলুতে কৃষকের নিকট হিমাগার পায় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। অথচ আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। এজন্য কৃষকরা হিমাগারে আলু বিক্রিতো দূরের কথা খোঁজ নিতেও আসছেন না।
 
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন  অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু আলুর বিকল্প ব্যবহার বাড়েনি।  বিকল্প ব্যবহার না বাড়লে এই বিপুল সংখ্যক  আলুর দাম পড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।  

ব.ম শামীম/আরএআর