কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে আর বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল একে একে নৌকাগুলো। চড়ন্দারের ঘণ্টার তালে তালে মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দে ছন্দে যৌবনভরা গড়াই নদের বুকে ছুটে চলছিল রকেট, জলপরি, লালন শাহসহ বাহারি নামের আটটি নৌকা।

মাঝি-মাল্লাদের হৈ হৈ রবে নেচে ওঠে গড়াই নদের দুই তীর। বৈঠার ছন্দে ছন্দে তুমুল গতিতে চলছিল অন্যকে অতিক্রম করার প্রতিযোগিতা। লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ—মাঝি-মাল্লাদের রং-বেরঙের এসব পোশাকই বলে দেয় নদে কতটা জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাগুরার প্রয়াত এমপি মো. আছাদুজ্জামান স্মৃতি নৌকাবাইচ উৎসব।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে মধুখালীর ডুমাইন ঘাট থেকে শুরু হয়ে মাগুরার শ্রীপুরের মাজাইল গড়াই ব্রিজের নিচে এসে শেষ হয় এই নৌকাবাইচ। নান্দনিক এই দৃশ্য দু’চোখে অবলোকন করে পুরো আনুষ্ঠানিকতা উপভোগ করতে সকাল থেকেই নদের দুই তীরে জড়ো হন মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী তিন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।

নৌকাবাইচ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুকিশোদের সরব উপস্থিতি আর উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় এই মেলায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গাপূজার মধ্যে এই আয়োজন পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অনেকে মতামত ব্যক্ত করেছেন। 

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নৌকাবাইচ শুরু হয়। চড়ন্দারের ঘণ্টার টং টং আওয়াজের তালে তাল মিলিয়ে মাঝিরা বৈঠা টানেন হেলেদুলে। ৮টি সুসজ্জিত নৌকা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই নৌকাবাইচের নান্দনিকতা উপভোগ করতে নদের দুই পাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার দর্শকের সরব উপস্থিতি নৌকাবাইচের আনন্দকে ছাপিয়ে দেয়।

খুলনা থেকে আগত জলপরি নৌকা প্রথম স্থান দখল করে জিতে নেয় একটি ১০০ সিসি রানার মোটরসাইকেল। কুষ্টিয়া থেকে আগত লালন শাহ দ্বিতীয় হয়ে অর্জন করে একটি ৮০ সিসি রানার মোটরসাইকেল। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মহম্মদপুরের আতিক হাসানের হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় একটি ফ্রিজ এবং একটি এলইডি টিভি দেওয়া হয় চতুর্থ স্থান অধিকারী আল্লাহর দান দলের হাতে।

বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম, পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিউজা উল জান্নাহ, শ্রীপুর থানার ওসি সুকদেব রায় প্রমুখ।

নৌকাবাইচের উদ্যোক্তা শ্রীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনূর রশিদ মুহিত বলেন, করোনার কারণে গ্রামবাংলার সংস্কৃতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। তাই সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের বাবা প্রাক্তন এমপি প্রয়াত আছাদুজ্জামান স্মৃতি নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়েছে।

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষের সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে এই নৌকাবাইচ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

এমএসআর