সালিসে উপস্থিত মাতব্বররা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় কোরআন শরিফ অবমাননার দায়ে আকবর আলী (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেছেন মাতব্বররা। একই সঙ্গে তাকে তিন মাস ১০ দিন গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) উপজেলার দাঁওগাঁও ইউনিয়নের শুকপাটুলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (১৩ অক্টোবর) এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে আকবর আলীর স্ত্রী অজুফা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছোট মেয়ে রহিমার স্বামী মঞ্জুরুল হকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেয় বড় মেয়ে আয়েশা। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় এই নিয়ে তাদের মাঝে মনোমালিন্য চলে আসছে। গত সোমবার (১১ অক্টোবর) মনজুরুল ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। 

ছোট মেয়ের স্বামী ও তার সঙ্গে আসা লোকজন আমার বৃদ্ধ স্বামী আকবর আলীর কাছে টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানতে চায়। তিনি টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানেন না বললে তারা চাপ প্রয়োগ করে। এতে আমার স্বামী আকবর আলী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর থেকে কোরআন শরিফ এনে মাটিতে ফেলে তার ওপরে পা রেখে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানেন না বলে জানান। কোরআন শরিফের ওপর পা রাখায় জামাইসহ অন্যান্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। 

অজুফা খাতুন জানান, পরদিন মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এ নিয়ে দুপুরে শুকপাটুলী বাজারে তিন থেকে চার শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সালিস বসে। সেখানে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মকবুল হোসেন, শুকপাটুলী দাখিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী মাস্টার, বটতলা মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান, শুকপাটুলী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা কুতুব উদ্দিনের উপস্থিতিতে সালিসে তার স্বামীকে জুতার মালা পরিয়ে তিন মাস ১০ দিনের জন্য গ্রামছাড়া করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। 

আলী আকবরের স্ত্রী বলেন, স্বামীকে কাফের ফতোয়া দিয়ে আমার তালাক হয়ে গেছে বলেও ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। আমাদের আবার বিয়ে করতে হবে বলেও সালিস থেকে জানানো হয়েছে। 

কোরআন অবমাননা করায় সালিসে ওই বৃদ্ধকে জুতার মালা পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে শুকপাটুলী দাখিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ বলেন, সালিসে হাজার হাজার মানুষ ছিল। সবাই ওই বৃদ্ধার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। তাই তার পরিবারকেই বিচারের দায়িত্ব দিলে তারাই বৃদ্ধকে জুতার মালা পরায়। 

এ বিষয়ে দাঁওগাঁও ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি সালিসে যেতে পারিনি। তবে ঘটনাটি আমি শুনেছি।

সালিসে ফতোয়া দেওয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মকবুল হোসেন বলেন, অন্যায় করলে তো শাস্তি পাবেই। ধর্মীয় রীতিতে যে শাস্তি আছে তার চেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কোরআন অবমাননা করায় তওবা করিয়ে তাকে জুতার মালা পরানো হয়েছে। তবে তাকে শারীরিক কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উবায়দুল হক/আরএআর