একটা সময় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তাঁত ছিল। সকাল-বিকেল শোনা যেত তাঁতের খুটখাট শব্দ। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ সেই শব্দ হারিয়ে যেতে বসেছে। জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ আকড়ে আছেন বাপ-দাদার এ পেশাকে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশুরবাড়ি তাঁতপল্লি এলাকার বাসিন্দারা তাদের মধ্যে পড়ে।

কথা বলে জানা গেছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে সদর উপজেলার কেশুরবাড়ি এলাকার ৫০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষ তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ২-৩টি করে তাঁত রয়েছে। এর কোনটা চাকাওয়ালা আবার কোনটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাঁতশিল্পীদের কদর কমলেও কমেনি তাদের ক্রয় করা সুতার দাম। গত বছর তারা এক মণ সুতা ২-৩ হাজার টাকায় কিনলেও এবার সেই সুতার দাম বেড়ে ৪-৬ হাজার টাকা হয়েছে। এতে প্রতি বছরই তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। আবার একটা সময় কম্বল কিনতে পাইকাররা তাঁতপল্লিতে ভিড় করলেও দিন দিন তাদের আনাগোনাও  কমে যাচ্ছে।

তাঁত কারিগর বরুণ রায় বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। আজ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বাপ-দাদার আমলের বলেই কাজটা ধরে রেখেছি। কোনোভাবে সংসার চালানো যায় আরকি।

দয়াল চন্দ্র দেবনাথ নামে আরেক তাঁত কারিগর বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এই কাজ করে আসছি। শীত এলে কাজ বেশি হয়। তবে বাজারে নতুন নতুন কম্বল আসায় দিন দিন আমাদের হাতের তৈরি কম্বলের চাহিদা কমে আসছে। সরকারিভাবে যদি সরাসরি আমাদের কাছ থেকে কম্বল কেনার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেঁচে যেতাম।  

পংশু নামে এক তাঁত কারিগর বলেন, আমরা সুতা বগুড়া থেকে কিনি। সেখানে এবার সুতার দাম অনেক বেশি। যে সুতা গত বছর প্রতি মণ ২-৩ হাজার টাকা ধরে কিনছি সেটা এবার ৪-৬ হাজার টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। পল্লিতে দৈনিক ২০-২৫ টা কম্বল বানানো হয়। সেগুলো সাইকেলে করে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। কোনোটার দাম ১০০ টাকা আবার কোনোটা ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের সামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কৃষির পরই তাঁতের অবস্থান। জেলায় তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

নাহিদ রেজা/এসপি