ঠাঁই মেলেনি সন্তানদের ঘরে, অন্যের মেঝেতে কাঁদছেন বৃদ্ধ বাবা
আব্দুল মালেক। বয়স ৯৯ বছর। ছিলেন গ্রাম্য কবিরাজ। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিল সাজানো সংসার। বয়সের ভারে এখন আর চলাফেরা করতে পারেন না। সন্তানদের ঘরেও এখন তার ঠাঁই নেই। অনাদরে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা আসাদুল ইসলামের বিল্ডিংয়ের মেঝেতে পড়ে আছেন। ৯ মাস মাথার নিচে ইট নিয়ে ঘুমাচ্ছেন। আর নিরবে চোখের পানি ফেলছেন।
আব্দুল মালেক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের ভাড়ুখালি গ্রামের মৃত তফিলউদ্দীন মোড়লের ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। স্ত্রীকে হারিয়েছেন ২৩ বছর আগে। একমাত্র ছেলে আব্দুল কাদের জমি কিনে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের সেকেন্দ্রা এলাকায় বসতি গড়েছেন। মেয়েটি শহরের সুলতানপুর এলাকার কাজিপাড়া বস্তিতে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম জানান, ৯ মাস ধরে আমার নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে মেঝেতে থাকছেন বৃদ্ধ আব্দুল মালেক। খাবার দেওয়াসহ আমি ও আমার পরিবার যেটুকু পারছি দেখভাল করছি। উনার ছেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তবে তিনি বাবার প্রতি আন্তরিক নয়। তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর ১০ দিন আগে মেয়ের জামাই এসে ওই বৃদ্ধকে আমার এখান থেকে ছেলের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, বাড়িতে যাওয়ার আগে বৃদ্ধ মানুষটি আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা রেখে যান। পরদিন উনার পুত্রবধূ টাকাগুলো নিতে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তাকে টাকাগুলো দিয়ে দিয়েছিলাম। টাকাগুলো নিয়ে তারা আবার বৃদ্ধ মালেককে দুই দিন পর তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আমার বাড়ির নিচেই পড়ে রয়েছেন।
বয়সের ভারে এখন চলাফেরার ক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন বৃদ্ধ আব্দুল মালেক। বিভিন্ন মানুষ তার অসহায়ত্ব দেখে মাঝেমধ্যে কিছুটা সহযোগিতা করেন। আব্দুল মালেক বলেন, আমার ছেলে আমাকে দেখে না। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি, দেখার কেউ নেই। তিনি দাবি করেন, ১৯৭১ সালে আমি যুদ্ধ করেছিলাম। তখন যৌবন ছিল। কলারোয়ার ১৪৪ নং প্লাটুনে ছিলাম আমি। কিন্তু পরে কাগজপত্র করিনি। লেখাপড়া জানি না বলে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কতদিন বাঁচব জানি না। এখন অসুস্থ হয়ে গেছি। থাকার জায়গাও নেই।
সাতক্ষীরা আদালতের আইনজীবী অ্যাড. সাঈদুজ্জামান জিকো বলেন, মানুষটি খুব অসহায় অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। মাথার নিচে ইট নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। পরে এটা দেখে কিছু খাদ্যসামগ্রী, একটি বালিশ ও নতুন একটি মশারি কিনে দিয়ে এসেছি। আলোচনা করে জেনেছি, উনার ছেলে উনাকে দেখেন না। সর্বশেষ পাঁচ হাজার টাকা ছিল সেটিও হাতিয়ে নিয়ে আবার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে বৃদ্ধ মানুষটিকে যদি কোনো বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া যায় তবে শেষ বয়সে একটু ভালো থাকতে পারবেন।
এ বিষয়ে আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল কাদের বলেন, এত কিছু করার পরও যদি আব্বা বলে আমি তাকে দেখি না। তবে দেখি না। আমার আর কিছু বলার নেই।
সাতক্ষীরা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে কখনও কেউ আমাকে জানায়নি। এখন যেহেতু জেনেছি, তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটি আমরা দেখছি।
আকরামুল ইসলাম/এসপি