রংপুরে হামলার বিচার দাবি
রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে রংপুর মহানগরে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান, প্রতিবাদী প্লাকার্ড, ব্যানার আর বিক্ষোভ থেকে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুর নগরের পয়েন্টে একাধিক সংগঠন থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা ছাত্রলীগ পীরগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বেরোবি ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে সকাল ১০টায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সনির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সকাল সাড়ে ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ডিসির মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) রংপুর জেলার সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, বাসদ রংপুর জেলার আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস, সদস্য সচিব মমিনুল ইসলাম, সিপিবি রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রাতুজ্জামান রাতুল প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
দুপুর ১২টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে নগর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন। এর আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসকন রংপুরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্তিপ্রিয়ম গদাধর গোস্বামী মহারাজ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রংপুর মহানগরের সদস্যসচিব প্রশান্ত কুমার রায়, রংপুর শিশু নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল কুমার রায় প্রমুখ। বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন।
এদিকে রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মহানগর ছাত্রলীগ। পরে শাপলা চত্বরে এক প্রতিবাদ সভায় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ বলেন, উসকানিমূলক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ৫০টির মতো বাড়িঘর তারা পুড়িয়ে ফেলেছে। যারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আমরা অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হামলাকারীদের কোনো ছাড় নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে অনেকের নাম-পরিচয় পেয়েছি। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রোববার রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দুর্বৃত্তরা এ সহিংসতা চালিয়েছে। এ ঘটনায় গ্রামটির ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা গরু-ছাগল, অলংকার, নগদ টাকাও নিয়ে গেছেন বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ