ভারতে আশ্রিত জেলে ফিরল বাড়ি, মেলেনি ২ লাশ
মৎস্যজীবী আবু মুসাকে নৌকায় করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন ভারতীয় এক নাগরিক
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত দুই মৎস্যজীবীর লাশের সন্ধান এখনও মেলেনি। তবে জীবিত থাকা ভারতে আশ্রিত অপর মৎস্যজীবী আবু মুসা বাড়িতে ফিরেছেন। রোববার (২৪) জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে সীমান্তের মাওন্দি নদী পার হয়ে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন এলাকা দিয়ে বাড়িতে ফেরেন ওই মৎস্যজীবী।
জীবিত বাড়িতে ফেরা ওই মৎস্যজীবী হলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবু মুসা (৪১)।
বিজ্ঞাপন
নিহত দুই মৎস্যজীবী হলেন পশ্চিম কৈখালী গ্রামের কফিলউদ্দিনের ছেলে রতন (৪২) ও ওই গ্রামের মনো মিস্ত্রির ছেলে মিজানুর রহমান (৪০)।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সীমান্তের মাওন্দি নদী দিয়ে মৎস্যজীবী আবু মুসাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে এলাকাবাসী। কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন এলাকার পাশ দিয়ে মাওন্দি নদী দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা লতিফ, আরিজুল, আরশ খানসহ ৪-৫ জন তাকে একটি নৌকায় এলাকায় নিয়ে আসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাঘের আক্রমণে নিহত দুই মৎস্যজীবী রতন ও মিজানুর রহমানের লাশের কোনও হদিস মেলেনি। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে দুই মৎস্যজীবীর ওপর বাঘ আক্রমণ করে। নৌকায় করে প্রাণে রক্ষা পায় আবু মুসা। পরবর্তীতে আবু মুসা কৈখালী সীমান্তের বিপরীতে ভারতের মধ্যে পুল্লাদ নামের এক ভারতীয়র কাছে আশ্রিত ছিল দুই দিন।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বিজিবির সিও’র মাধ্যমে ভারতীয় বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক যোগাযোগ করেছিলাম। তবে বাঘের আক্রমণে নিহত দুই মৎস্যজীবীর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনা তিনদিন গড়িয়েছে আর সম্ভবনা নেই। জীবিত থাকা আবু মুসা ভারতীয় যে বাসিন্দার কাছে ছিলেন তিনি নৌকায় করে আমাদের দেশের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ফিরে আসা জেলে আবু মুসা বলেন, মাছ বা কাকড়া ধরতে নয়; আমাকে নিয়ে গিয়েছিল শ্রমিক হিসেবে গরু আনতে। সেজন্য আমাকে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা দেয়। আমি এই প্রথম গিয়েছিলাম। অনেকটা জোর করে নিয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় নৌকায় উঠার পর সারারাত নৌকা চলে। জঙ্গল পথে সাগরের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সেখানে সুন্দরবনের একটি খালের মধ্যে থাকি আমরা।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে জ্বালানি কাঠের জন্য আমরা বনে প্রবেশ করি। এরপর প্রথমে আমার দুলাভাই মিজানুর রহমানকে বাঘে ধরে। এটা দেখে রতন চিৎকার দেয়। এরপর রতনকেও বাঘে ধরে। আমি তখন খালে ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকার নিচে আশ্রয় নেই। আমার চোখের সামনে দুইজনকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়।
কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক আলী ও সীমান্ত এলাকার নীলডুমুর ১৭ বিজিবির সিও ইয়াছিন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
তবে নীলডুমুর ১৭ বিজিবির সিও ইয়াছিন চৌধুরী আগে জানিয়েছিলেন, ‘২১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বিপরীতে ভারতীয় অংশে পাইজুরি খালে (ম্যাপে নেই) দুই মৎস্যজীবী বাঘের আক্রমণে নিহত হন। জীবিত থাকা আবু মুসার মাধ্যমে ঘটনাটি জানা গেছে। লাশ দুটি উদ্ধারের জন্য বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে এখনও লাশের সন্ধান মেলেনি। স্থানটি দুর্গম হওয়ায় উদ্ধারকাজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
এমএসআর