ফেনীতে ফেসবুক লাইভে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী ওবায়দুল হক ভূঁঞা টুটুলকে (৩৩) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম জেবুন্নেছা এ রায় দেন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওবায়দুল হক ভূঁঞা টুটুল (৩৩) ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারাহিপুর এলাকার গোলাম মাওলা ভূঁঞার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে (২৮) হাত-পা বেঁধে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন টুটুল। হত্যার এ দৃশ্য ফেসবুকে লাইভে দেখান তিনি। লাইভে টুটুল সে সময় বলেন, ‘আমার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করত তাহমিনা। আজ থেকে আমার পরিবার আর ব্ল্যাকমেইলের শিকার হবে না।’ লাইভে এসে টুটুল তার স্ত্রীকে হত্যার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান এবং ঘটনার জন্য নিজেই দায়ী বলে স্বীকার করেন। লাইভে তার মেয়েকে দেখভালের জন্য তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেন।

এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় লকডাউন শুরু হলে কাপড়ের দোকানের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যান টুটুল। স্ত্রীকে হত্যার পর টুটুল নিজেই ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে তার বাড়িতে যেতে বলেন। হত্যায় ব্যবহৃত দা ও টুটুলের মোবাইল ফোন জব্দ করে  পুলিশ।

মামলার নথি অনুযায়ী, তাহমিনা আক্তার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের সাহাব উদ্দিনের মেয়ে। বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে বিয়ে করেন ফেনীর টুটুলকে। বিয়ের পর থেকে অভাব-অনটন নিয়ে পরিবারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হত। যৌতুকের জন্য তাহমিনাকে টুটুল নির্যাতন করেন এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে কয়েক দফা টাকা নেন। একপর্যায়ে আরও টাকার জন্য চাপ দিলে তাহমিনা দিতে অপরারগতা প্রকাশ করেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহমেদ বলেন, হত্যার দিনই নিহতের বাবা সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইমরান হোসেন গত বছরের ১১ নভেম্বর আসামি টুটুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর টুটুলের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত আজ এই রায় দেন বলে জানান পিপি।

রায়ে নিহত তাহমিনার বাবা সাহাব উদ্দিন সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। দ্রুত রায় কার্যকর হলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। অবিলম্বে রায় কার্যকর হবে এই প্রত্যাশা করছি।

তবে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, শুধু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ভিত্তিতে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা দ্রুত উচ্চ আদালতে আপিল করব।

আরএআর