‘ঘুম থাকি উঠি দেখি ঘরত এক হাঁটু পানি, বউ বাচ্চা নিয়া কোনো মতে বাঁধে আসি উঠছি। হাতের কাছে যা পাচি তাই নিয়া আসছি। বাড়ির যাগাত এখন নদীর পানি আর ঢেউ। বউ বাচ্চা নিয়া কোটে যামো এখন?’

কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝারসিংগের সর এলাকার লাল মিয়া (৫০)। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। শুধু লাল মিয়াই নয় তার মতো একই অবস্থা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকার অধিকাংশ মানুষের।

লাল মিয়া জানান, কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই তার সংসার চলে। বাবা, স্ত্রী আর বাচ্চা নিয়ে আটজনের সংসার তার। ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৪টি টিনের ঘর পানিতে ভেসে গেছে। এ মুহূর্তে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার।

গত বুধবার (২০ অক্টোবর) সকালে বন্যায় কালীগঞ্জ এলাকায় তিস্তা নদীরক্ষা বাঁধের দুটি অংশ ভেঙে যায়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ওই ইউনিয়নে ভিটা মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪০০ পরিবার। পানিবন্দি রয়েছে ১ হাজার ৫০০ পরিবার।

বসতভিটা হারিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে লাল মিয়ার। তিনি বলেন, ‘সকাল (বৃহস্পতিবার) থাকি পানি কমেছে, কিন্তুক কষ্ট তো কমেছে না, জ্বালা আরও বাড়েছে। খাবার নাই, থাকার যাগা (জায়গা), কোনো কিছুই নাই।’

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙে যেসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের দুই দিন থেকে শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।  বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দ দেওয়া ৯ টন চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে তিস্তার পানি বীপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাউবো ডালিয়া ডিভিশন কাজ করে যাচ্ছে।

এসকেডি