রবিউল চার মাস ধরে তৈরি করেন ভালোবাসার নৌকাটি

রবিউল ইসলাম নৌকা মার্কার পাঁড় ভক্ত। ভালোবাসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে খুশি হয়ে তিন বছর আগে নৌকা গাড়িটি তৈরি করেছেন। স্বপ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীকে নিজের হাতে গড়া নৌকা গাড়ি উপহার দেবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দ্বার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। তবে হাল ছাড়েননি রবিউল। এখনো স্বপ্ন দেখেন তার নৌকা গাড়িতে উঠবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

রবিউল ইসলাম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নের হাউদারপাড় গুনজোরখাঁ গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মৃত হাফিজুল ইসলাম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রবিউল ইসলাম দ্বিতীয়। সংসারে তেমন সচ্ছলতা না থাকলেও মনের দিক থেকে রবিউল বেশ শৌখিন। তার এক প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে।

নিজের রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপে ব্যতিক্রমী এক নৌকা তৈরি করেছেন রবিউল ইসলাম। এতে ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা। ব্যাটারিচালিত এ নৌকা চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে। একটা স্বপ্ন নিয়ে গড়া এ নৌকা গাড়িটিকে শুধু নৌকা বলতে নারাজ রবিউল। এ জন্য নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসার নৌকা’।

বাবাহারা রবিউলের অভাব-অনটনের সংসার চলে রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করেন। নিকটস্থ বাজারে রবিউলের রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপ। সেখানে দিন-রাত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই ব্যস্ততার ফাঁকেই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে ২০১৯ সালের জুনে শুরু করেন নৌকা তৈরির কাজ। নিজের ঘাম ঝরানো উপার্জনের টাকায় না কুলালে সমিতি থেকে নেন ঋণ। চার মাস ধরে তৈরি করেন ভালোবাসার নৌকাটি।

রবিউলের হাতে গড়া নৌকা গাড়িটি ব্যাটারিচালিত। তবে এই নৌকায় বইঠা নেই। নেই পাল তোলার ব্যবস্থা। বাঁশ-কাঠের কোনো ব্যবহারও হয়নি। সম্পূর্ণ রড, স্টিল ও টিন দিয়ে তৈরি করা নৌকা গাড়িটিকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা চার্জ করতে হয়। চার্জ ভালো হলে ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার চালানো সম্ভব। কিন্তু রবিউল নৌকাটি ভাড়ায় চালানো কিংবা উপার্জনের জন্য তৈরি করেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এটি উপহার দিতে তৈরি করেছেন। সাত আসনবিশিষ্ট নৌকার আদলে তৈরি গাড়িটি দেখতে বেশ সুন্দর। লাল-সবুজ রঙের সমন্বয়ে রঙিন এ গাড়িটি বেশ পরিপাটিও।

কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়, শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে নৌকা গাড়িটি রবিউল তৈরি করেছেন। এখন ব্যতিক্রমী এই নৌকা গাড়িটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান। এ জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সংবাদকর্মীদের কাছে তিন বছর ধরে ছুটে বেড়াচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সী রবিউল। কখনো পীরগাছা উপজেলা চত্বরে, নয়তো বা কোনো অলিগলি সড়কে চোখে পড়বে এ নৌকা গাড়িটি। রংপুরে আওয়ামী লীগের কোনো সভা-সমাবেশ থাকলেও নৌকা নিয়ে ছুটে আসেন রবিউল। তবে হাল ছাড়েননি।

সম্প্রতি তার সঙ্গে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের দেখা হয় পীরগাছা হাইস্কুল সড়কের কাছে। কথা হয় ব্যতিক্রম এ নৌকা তৈরির অদ্যোপান্ত নিয়ে। রবিউল বলেন, ছোটবেলা থাকি নৌকা মার্কা ভালো লাগে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মনোত আলাদা একটা মহব্বত কাজ করে। অনেক কষ্টে দেড় লাখ টাকা খরচ করে নিজ হাতে এই নৌকা তৈরি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছোত মোর নৌকাটা পৌঁছে দেবার আশা নিয়া তিন বছর কাটানু। কেউ কোনো ব্যবস্থা করি দিলে না। মাঝেমধ্যে একনা নৌকা নিয়ে ঘুরি বেড়াও। আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ থাকলে যাও। এটা দিয়া মোর ব্যবসা করার ইচ্ছা নাই।

প্রধানমন্ত্রী এই নৌকাতে উঠলে রবিউলের মন প্রশান্তিতে ভরে যাবে উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে মোর ভালোবাসার নৌকা উপহার দিম। যদি প্রধানমন্ত্রী এই নৌকাত চড়ে, তাইলে মুই শান্তি পাইম। আগোত নৌকা গাড়ি বানাইতে চার মাস সময় লাগছে। এ্যালা বানাইলে এক মাসোতে রেডি করা যাইবে। প্রধানমন্ত্রীক এই নৌকা উপহার দিবার আশাতে মুই এল্যাও এটা মাঝেমধ্যে নয়া করি রং করি থাকো।

রবিউলের তৈরি করা নৌকা গাড়িটি যেখানেই দাঁড়াবে, সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। নৌকা গাড়িটি দেখতে আসা একরামুল ইসলাম বলেন, পীরগাছায় এটি প্রথম। এর আগে এ রকম ব্যতিক্রম নৌকা চোখে পড়েনি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তৈরি করা নৌকা গাড়ি দেখতে সুন্দর। এর জন্য কারিগর রবিউল প্রশংসার দাবি রাখেন।
 
এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন, কেউ যদি প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবেসে কোনো কিছু তৈরি করে বা উপহার দেয়, এটা নিঃসন্দেহে ভালো। করোনাসহ বিভিন্ন কারণে রবিউলের নৌকা গাড়িটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপহার হিসেবে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে এবার বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করা হবে।

এনএ