দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিক পরিচয়ে রাজশাহী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি দল। চাঁদাবাজি ও জিম্মি করা দলটির রোজকার ঘটনা। প্রত্যাখ্যাত হলেই চলে অপপ্রচার। অভিযোগ আছে, পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দলটি। এবার সাংবাদিকতার নামে এমন অপকর্ম রুখতে এককাট্টা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকরা।

রোববার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে পেশাদার সাংবাদিকরা নগরীর ব্যস্ততম এলাকা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে অবস্থান নেন। রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন চলে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত।

জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) দফতরের আঞ্চলিক পরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিবের অপসারণ দাবিতে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেন কয়েকজন কথিত সাংবাদিক। এই আয়োজন ছিল রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব নামের একটি ভুইফোঁড় সংগঠনের ব্যানারে।

মাউশি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। তা না পেয়ে তারা মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করে। এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড সচিবের বক্তব্য, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে তারা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খবর পেয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার নামে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আয়োজকদের বলেন।

তখন কথিত সাংবাদিকরা রফিকুল ইসলামের ওপর চড়াও হন। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদকে লাঞ্ছিত করা হয়। সহকর্মীদের রক্ষায় গিয়ে লাঞ্ছিত হন আরও কয়েকজন সাংবাদিক। পুলিশের উপস্থিতিতেই এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, মাজহারুল ইসলাম চপল, আবু কাওসার মাখন, ফারুক আহম্মেদ, রেজাউল করিম, শাহিনুর রহমান সোনা, আল-আমিন হোসেন, লিয়াকত হোসেন, সাগর নোমানীসহ বেশ কিছু কথিত সাংবাদিক তাদের ওপর হামলা চালান। এ বিষয়ে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

পরে সাংবাদিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে কামারুজ্জামান চত্বরে অবস্থান নেন ক্ষুব্ধ পেশাদার সাংবাদিকরা। তখন বন্ধ হয়ে যায় সড়কে যান চলাচল। হামলাকারী কথিত সাংবাদিকদের আটক ও নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের প্রত্যাহারের দাবি তোলেন তারা।

খবর পেয়ে দুপুরের দিকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও নগর পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা বিষয়টি নিয়ে নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান।

আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আর দাবি আদায়ে রাস্তায় তখন অন্দোলন চালাচ্ছিলেন অন্য সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদলটিতে ছিলেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জনি প্রমুখ।

দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন সাংবাদিক প্রতিনিধিরা। ফের নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। শেষে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, হামলাকারী ফারুক, লিয়াকত আর রেজাউলকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। বোয়ালিয়া থানার ওসি প্রত্যাহারের বিষয়টি তারা দেখছে। এরপরই আন্দোলন স্থগিত করেন সাংবাদিকরা।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, হামলাকারী অন্যরাও আইনের আওতায় আনা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়ার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণকে প্রত্যাহার করতে তিন দিন সময় চেয়েছেন। আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে আগামী বুধবার দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও হবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এনএ