চার কন্যা সন্তানের জনক-জননী খলিলুর রহমান ও রাবেয়া খাতুন। বিয়ের পর তারা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজ রাখে না কেউ। সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আয় রোজগার করারও কোনো ক্ষমতা নেই। জায়গা-জমি তো দূরের কথা, থাকার মতো ঘরও নেই। উপায় না পেয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের এক গোয়াল ঘরে। এটিই এখন তাদের একমাত্র ঠিকানা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থা। ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামে। সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়াল ঘরে একটি ভ্যানের উপরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শুয়ে আছেন। স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর ধরেই এ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শালিখার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

কথা হয় বৃদ্ধ খলিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার বয়স ৮৬ বছর। তার স্ত্রী রাবিয়া খাতুনের বয়স ৬৬ বছর। তাদের চার মেয়ে আছে। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা এখন সুখে-শান্তিতে সংসার করছে। কিন্তু বাবা-মায়ের খবর রাখে না।

কাতর কণ্ঠে তিনি বলেন, আগে তিনি পুরাতন কাপড়-চোপড় বিক্রি করে রোজগার করতেন। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন চলাফেরার আর ক্ষমতা নেই। ৬৬ বছর বয়সী স্ত্রী রাবেয়া খাতুন খুবই অসুস্থ। ভিটেবাড়ি না থাকায় ভ্যানে করেই যেখানে সেখানে রাত কাটান। এখন চলাফেরা করার ক্ষমতা নেই বলে আশ্রয় নিয়েছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের বাড়িতে। ইলিয়াস হোসেন তাকে জায়গা দিয়েছেন তাদের গোয়াল ঘরে।

অশ্রু ভেজা চোখে কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে থেমে যাচ্ছিলেন খলিলুর রহমান। কীভাবে নিজেদের ভরণপোষণ চালাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আশ্রয়দাতা খলিলুর রহমান বলেন, তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো সেরকম কোনো ঘর নেই। তাই আমি তাদের গোয়াল ঘরের এক পাশে জায়গা দিয়েছি থাকার জন্য। মানুষকে গোয়াল ঘরে রাখা যায় না। কিন্তু উপায় না থাকায় তাদের আমি গোয়াল ঘরে থাকতে দিয়েছি।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধার এ দুরবস্থা দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন স্থানীয় এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গেই তা ভাইরাল হয়। পরে মাগুরা বাইকার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং আল ইদা নামের খুলনার আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসেন তাদের সাহায্য করতে। প্রাথমিকভাবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী এবং কাপড়-চোপড় দেওয়া হয় এ দুই সংস্থার পক্ষ থেকে। তবে তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা এখনও কেউ করতে পারেনি।

খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আল ইদার সদস্য মো. এস এম শাদী বলেন, তাদের ভরণপোষণের জন্য আমরা আপাতত একটি ব্যবস্থা করেছি।

মাগুরার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাগুরা বাইকারের সদস্য শাহিনুর ইসলাম বলেন, তারা যাতে অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পারেন তার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ভ্যান গাড়িতে করে শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘুরে বাড়াচ্ছেন বৃদ্ধ স্বামী ও স্ত্রী। তাদের বিষয়ে শালিখা উপজেলার ইউএনওকে খোঁজ-খবর নিয়ে থাকার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

এসএসএইচ