ছোটবেলা থেকেই সামিয়া আক্তারের স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ালেখা করার। সেই স্বপ্ন মনে পুষে রেখে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। অবশেষে সেই সোপান পাড়ি দিয়ে পূরণ হয়েছে তার স্বপ্ন। এ বছর ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেখানে সামিয়া পেয়েছেন ৭৫ দশমিক ৫ নম্বর। তার মেধা স্কোর ৯৫ দশমিক ৫। এ বছর ‘খ’ ইউনিটে পাসের হার ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

চাঁদপুর শহরের নিশিবিল্ডিং এলাকার নিশি রোডের দেলোয়ার হোসেন ও জীবনা বেগম দম্পতির সন্তান সামিয়া। সামিয়ার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিন বোনের মধ্যে সামিয়া দ্বিতীয়। তিন মেয়েকে মানুষ করার অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন রত্নগর্ভা মা জীবনা বেগম।

চাঁদপুর শহরের মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যকর কৃতকার্য হন সামিয়া। ছোটবেলা থেকেই স্কুল-কলেজের সব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ছিল তার। তাই শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে প্রিয় ছিলেন বরাবর।

সামিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়েছে সামিয়াকে। পড়াশোনার খরচ বহন করতে টিউশন করতেন তিনি। পাশাপাশি পরিবারের খরচও বহন করতেন পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকা এই শিক্ষার্থী। ঢাবিতে পড়ালেখার খরচ বহনের অনিশ্চয়তা উঁকি দিত তার মনে। তবু হাল ছাড়েননি।

মা-বাবাকে সুখী আর খুশি করতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার ইচ্ছা সামিয়া আক্তারের। সামিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে। আমাদের পরিবারের অবস্থা আগেও ভালো ছিল না, এখনো নেই। আমার বাবা অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। তাই পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমি আর আমার বড় বোনের (মারজানা) হাতে। দুজনে টিউশনির টাকা দিয়ে সংসার চালাই। কষ্ট করতে করতেই এতদূর এসেছি।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, অবশেষে সফলতা, কেমন লাগছে, এমন প্রশ্নে সামিয়া বলেন, আমার আজকের কৃতিত্বের প্রধান উৎসাহদাতা হলেন আমার বড় বোন। আর জোগানদাতা ও পরিশ্রমকারী হচ্ছেন আমার মা। বাকিটা আমার চেষ্টা-শ্রম। এ ছাড়া আমার কলেজের শিক্ষকরা খুব বন্ধুসুলভ ছিলেন। তারা সব সময় সহযোগিতা করতেন। পুরো কলেজ খুশি হয়েছে আমার ঢাবিতে সুযোগ হওয়ায়। এতে আমিও খুশি কলেজকে এমন খুশির উপলক্ষ দিতে পেরে। এখন আমার জীবনের প্রথম লক্ষ, আমি ভালো মানুষ হতে চাই। ম্যাজিস্ট্রেট পেশাকে বেছে নিতে চাই। আমি দেশের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।

সামিয়ার বড় বোন মারজানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পেছনে সামিয়াকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহ আমাদের ওপর সহায় ছিলেন, তাই সে এই স্থানে আসতে পেরেছে। সামিয়া দিনের বেলা টিউশনি ও ক্লাস করে রাতে পড়াশোনা করত। তার মধ্যে কখনো ক্লান্তি ভাব আসেনি। পড়াশোনা করতে গিয়ে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারত না। সেই পরিশ্রমই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

আগেই সামিয়া বলেছেন তার সফলতার চূড়ায় উঠতে সবচেয়ে বেশি অবদান তার মায়ের। সেই মা জীবনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে, এটা আমার কাছে খুব খুশির খবর। মা হিসেবে গর্বের ব্যাপার। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন, সে জন্য দেশের মানুষের জন্য কিছু করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।

চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, এতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা আনন্দিত। বরাবরের মতো মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে আসছে। এবার আমরা আরও বেশি আনন্দিত, সামিয়া মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হওয়ায়।

তিনি বলেন, সামিয়ার পারিবারিক অসচ্ছলতা কারণে তার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা থাকবে। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

এনএ