এক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন বেল্লাল হোসেন। তারপর দুই পা কেটে ফেলতে হয়। ভরসা হয়ে রইল দুটি হাত। সেই থেকে দুহাতে ভর করেই চলছে তার জীবন। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ছোট একটি মুদি দোকান দিয়ে কোনো রকম চালান সংসার। এখন দুই হাতে করতে কষ্ট হয় বিধায় দুটি কৃত্রিম পায়ে দাঁড়াতে চান বেল্লাল। কিন্তু তার সেই সামর্থ্য না থাকায় পূরণ হচ্ছে না সেই স্বপ্ন।

মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার মাথাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মোল্লার ছেলে বেল্লাল মোল্লা (৩৪)। পরিবারে স্ত্রী রহিমা বেগম, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়েই তার সংসার। মেয়ে বৃষ্টি পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে আর ছেলে আরিয়ান দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

জানা যায়, ছোটবেলায় বেল্লাল লঞ্চে বাদাম বিক্রি করতেন। ২০০০ সালে বরিশাল তুর্কি বন্দর থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা মহানগরী লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বেল্লাল। তখন তিনি আহত হন। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তার পা দুটি কেটে ফেলেন। একেবারে অচল হয়ে যান তিনি। পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ছোট একটি মুদি দোকান দেন। তবে বাড়ি আর দোকানে চলাচলে তার খুব অসুবিধা হচ্ছে। একটি হুইলচেয়ার বা কৃত্রিম পা কেনার সামর্থ্যও নেই তার।

বেল্লাল মোল্লা বলেন, আমি কাজ করে উপার্জন করে বাঁচতে চাই। এ অবস্থায় একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সবাই। কিন্তু এই সামান্য আয় দিয়ে চিকিৎসা খরচ জোগাতে পারি না। কোনো উন্নত চিকিৎসা করাও সম্ভব হচ্ছে না। দুটি পা থাকলে চলাচলটা অন্তত করতে পারতাম।

বেল্লাল মোল্লার মেয়ে বৃষ্টি বলে, যদি আমার বাবাকে কেউ দুটি কৃত্রিম পা দান করত, তবে সবার মতো আমার বাবাও আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতে পারত। এতে আমার বাবার জীবন কিছুটা হলেও সহজ হয়ে যেত।

স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর দুই পা নেই। আমি জেনেই তাকে বিয়ে করেছি। আমাদের নিজেদের যা ছিল এবং এলাকালার সবার সহযোগিতায় এই দোকানটুকু দিয়েছি। এতে কোনো রকম আমাদের সংসার চলছে। এখন আমার স্বামীর দুটি কৃত্রিম পা হলে ভালো হতো। কিন্তু কৃত্রিম পা কেনার সামর্থ্য তো আমাদের নেই।

প্রতিবেশী রফিকুজ্জামান বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সবাই মিলে টাকা তুলে আমার তাকে দোকান কিনে দিয়েছি। এখন পরিবার নিয়ে কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছে বেল্লাল। তবে কৃত্রিম পা বা হুইলচেয়ার হলে তার জন্য ভালো হয়।

সিডিখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. চান মিয়া সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। আমাদের এখানে এখন ইউপি নির্বাচন চলছে। যদি আমি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই, তাহলে তাকে দুটি কৃত্রিম পা বা একটি হুইলচেয়ার কিনে দেব।

এনএ