মেঘনা উপকূলবর্তী জনপদ লক্ষ্মীপুর। জেলায় সয়াবিনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে শসার চাষ হয়। এবার শসা উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে রোদ আর ভাইরাসে গাছ মরে যাওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও কমলনগরের চরমার্টিন গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। 

এদিকে লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার নেই। ফলে উৎপাদিত সবজি অল্প সময়ে খুব কম দামে বিক্রি করতে হয়। এ কারণেই উৎপাদিত শসার ভালো দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। 

এবার জেলায় ৬২০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯৮ মেট্টিক টন শসা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টায় কৃষকরা জমিতে ফসল চাষ করে। কিন্তু বিভিন্ন রোগবালাইয়ে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না। এর পরিবর্তে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশায় ভুগতে হয়। এরপরও এ জেলার কৃষকরা থেমে থাকেনি। তারা মৌসুম অনুযায়ী অন্য ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হলেও কৃষিতেই তাদের জীবন চলে। তাদের উৎপাদিত শসা জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়।

জানা গেছে, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নে সিংহভাগ শসা উৎপাদন হয়। এ উপজেলার লাহারকান্দি, উত্তরজয়পুর, শাকচর, টুমচর, চররমনী, তেওয়ারীগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার উত্তর চরলরেন্স, মধ্য চরমার্টিন, উত্তর চরমার্টিন, চর কালকিনি, চর ফলকন ও চর কাদিরা এলাকাতেও শসার উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষক অলি উল্যা জানান, এবার তিনি দুই ধাপে শসা চাষ করেছেন। প্রথমবার ভালো হলেও পরেরবার ভাইরাসে চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফের তিনি চারা রোপণ করলেও ফলন ছোট আকার হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। গতবার সবজি চাষ করে তাকে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, ঋণ নিয়ে শসা চাষ করেছি। কিন্তু রোদে গাছের পাতা পুড়ে গেছে। ফলনও আশানুরূপ হয়নি। লাভ দূরের কথা, মূল টাকা ওঠে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, শসা ৬০-৬৫ দিনের ফসল। দুই থেকে তিনবার ফলন দিয়েই গাছটা মারা যায়। কৃষকরা যদি প্রয়োজন অনুসারে পরিমাণমতো কীটনাশক না দেয় তাহলে পাতাগুলো জ্বলে যেতে পারে। কড়া রোদেও যদি কীটনাশক ব্যবহার করে তাহলেও গাছ মারা যেতে পারে। সকালে অথবা বিকেলে কীটনাশক দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করলে শসা গাছ মরে যাওয়ার কথা নয়।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি