বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তবে এই সংগঠনের ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সব ইউনিটের এখন জীর্ণদশা। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ঢাকা জেলা উত্তরের প্রায় সব কমিটিই নিষ্ক্রিয়। অধিকাংশ কমিটির সদস্যরা বিয়ে করে হয়েছেন সংসারী। 

ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের অধীনে উপজেলা, থানা ও সরকারি কলেজসহ আটটি ইউনিট রয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখন হয় মেয়াদোত্তীর্ণ না হয় বিলুপ্ত। স্বয়ং ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সরল স্বীকারোক্তি হলো তারা ব্যর্থ। তারপরও নিষ্ক্রিয়তার বেড়াজাল ভেদ করে সক্রিতার স্বপ্ন দেখছেন কর্মীসহ ভবিষ্যত পদ-প্রত্যাশীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাভার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ, সাভার পৌর ছাত্রলীগ, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগ, ধামরাই কলেজ ছাত্রলীগ, ধামরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ, ধামরাই পৌর ছাত্রলীগ ও ধামরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনেকেই বিয়ে করে পেতেছেন সংসার। অনেকের আবার বয়স শেষ। এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। আর গত চার বছরেও ছাত্রলীগের এসব ইউনিট চাঙ্গা না হওয়ার ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকা জেলা উত্তরের বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাভারের প্রতিটি ইউনিটেরই জীর্ণদশা। প্রায় সব ইউনিটের চিত্র একইরকম। এসব ইউনিটের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যেই তাদের কমিটির নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ মেলে। যার জন্য অনেকেই দায়ী করেছেন ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সামর্থ্যহীনতাকে।

ধামরাই সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, কাগজে কলমে এখন ধামরাইয়ে ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটে কমিটি নেই। ২০১২ সাল ও ২০১৭ সালে ধামরাইয়ের কিছু ইউনিয়নে কমিটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সেগুলো নিষ্ক্রিয়। ধামরাইয়ের দুই নেতা বর্তমান সাংসদ বেনজীর আহমেদ (ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) ও সাবেক সাংসদ আব্দুল মালেকের কোন্দলের কারণে ধামরাইয়ের কমিটিগুলো হয় না বলে দাবি করেন তিনি। 

সাভার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ শাখা (সাবেক সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) কমিটির সভাপতি অমিত দত্ত বলেন, সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালে। তখন থেকে আমিই সভাপতি। তবে বর্তমানে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। সেন্ট্রাল কমিটি থেকে কবে নতুন কমিটি দেওয়া হবে আমার জানা নেই।

সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এখন ছাত্র রাজনীতির বাইরে। বিয়ে করে পেতেছেন সংসারও। এই কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান অভি বলেন, আমাদের কমিটি ২০১৫ সালে গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন হয় ২০১৬ সালে। এই কমিটির সভাপতি আমি। এরপর আর কোনো কমিটি দেওয়া হয়নি। আমি দুই বছর হলো বিয়ে করেছি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুবেল মন্ডল বিবাহিত। দুই বছর আগে থেকেই সম্মেলন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। হয়ত করোনা ও লকডাউনের কারণে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি।

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগেরও একই অবস্থা। তারা সক্রিয় থাকলেও কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবীর বলেন, ২০১৫ সালে সাভার কলেজ, সাভার পৌর ও আশুলিয়া থানাসহ আমাদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সবগুলো এখন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি।

ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার রাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব পরিবর্তন হওয়ার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিগুলো পরিবর্তন হয় না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা জেলা উত্তর নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা ছাড়া নিজেদের স্বাক্ষরে কোনো কমিটি এখনও দিতে পারেননি। সেন্ট্রাল থেকে আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের কমিটি করতে বলা হলেও তা পারেননি। এ পর্যন্ত কোন কমিটি না দিতে পারায় তাদের সফল বলা যায় না। 

ঢাকা জেলা উত্তরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিতর্কিতরাও স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু কোনো অভিযোগ আসেনি।

ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে কোনো কথা নেই। সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ- ছাত্রলীগ কোনো কিছুর নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে? সবই তো মেয়াদ শেষ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিয়ম অনুযায়ী কমিটি হইছে, কমিটি পূর্ণাঙ্গও হইছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ তো সবই। মেয়াদ কোনো ইস্যু না। সেন্ট্রাল মনে করলে কমিটি হবে। 

মাহিদুল মাহিদ/এসপি