রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন তার মামা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ফারুক আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার সময় রাসেল খান গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তার গাড়ি চালকের কোনো লাইসেন্স নেই। কেন তিনি গাড়ি চালিয়েছেন? লাইসেন্সবিহীন চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। পুলিশের কাছে রাসেল লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। এতে সে গাড়ি চালানোর অধিকার রাখে না। এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যার শামিল। এটি হত্যাকাণ্ড। 

ফারুক আহমেদ বলেন, করোনকালে মানুষকে বাঁচানোর যেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় তার একশ ভাগের এক ভাগও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়া অবশ্যই রোধ হত। আমরা চাই না আর কোনো বাবা বা পরিবার তাদের সন্তানকে এভাবে হারাক। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সেখানকার এমপি আমাদের অভিভাবক। তারা তাদের সন্তানের কথা চিন্তা করে নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনা অনুভব করলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট।  

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল এলাকায় গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জজ হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নিয়েই পরপারে চলে গেলেন পরিবারের ছোট ছেলেটি।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাঈম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে প্রথমে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়। পরে সে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়। সে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে জজ হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে নিজের উজ্জল ভবিষ্যত রচনা করবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিবার ও এলাকার নাম দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তা আর হলো না। অদক্ষ চালকের গাড়ির চাপায় সেই স্বপ্নগুলো মাটির নিচে চাপা পড়েছে।

জানা গেছে, বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তান মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবার সূত্র জানায়, নাঈমের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। তিনি রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় বইয়ের ব্যবসা করেন। ব্যবসা ও দুই ছেলের উন্নত পড়ালেখার জন্য তিনি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাওলাহাটি এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন। শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ওই বাড়িতে যান। জাওলাহাটিতেই নাঈমের প্রথম নামাজের জানাজা হয়।  

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর