ফুল বিক্রেতা নয়ন মিয়া

‘নিজের জমিজমা নাই। মাইনষের জমি ভাড়া নিয়া ফুলের চারা লাগাই। প্রতি বৈকালে এই ফুলের চারা ভ্যানে করি পৌরসভার ইনু ওনু বেচি। শীত আইলে দুইডা ট্যাহা কামাবার পাই, সংসারের টুক টাক খরচা মিটাইয়ে এল্লাহানি বালা মন্দ খাবার পাই। শীত আইলে আমগো ফুল ব্যবসায়ীর ঈদ ঈদ নাগে।’

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ফুল বিক্রেতা নয়ন মিয়া। তিনি সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের নয়ন নার্সারির মালিক। নার্সারিতে কাজ করার সময় কথা হয় তার সাথে। 

নয়ন বলেন, ‘নার্সারিতে বর্ষা ছাড়া চারা বিক্রি অয় না। বর্ষার সময় টুকটাক আম, জাম, সবরি (পেয়ারা), লিচু, জলফই (জলপাই) এগুলার চারা বেইচ্চা কোন রহম জোড়াতালি দিয়া সংসার চালাই। নাইলে পুরা বছর বইয়া দিন পার করন লাগে। কিন্তু শীত আইলে বগুড়া তন হাতেরহম (নানা রকম) চারা নিয়া আসি। এরপর চারাগুলা জমিতে লাগাই, পানি দেই, গোবর দেই। এক সময় চারাগুলাতে ফুল আহে। শহরের অনেক মানুষ ফুলের বাগান করতে ভালোবাসে। তহন তাগো কাছে হরেক রহম ফুলের চারা বেইচ্চা দুই এক পয়সা বেশি কামাই করি।’

নয়ন নার্সারির পাশেই রাসেল নার্সারি। কথা হয় রাসেল নার্সারির মালিক রাসেলের সাথে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ফুলের নার্সারি করেছেন। কারণ শীতকালে বিভিন্ন রকম ফুলের চাহিদা থাকে। এ সময় অনেক ফুল ফুটে। তাদের মধ্যে তিন চার রকমের গাঁদা, কসমস, গ্লাডিওলাস, জিপসাম, গোলাপ, সূর্যমুখী অন্যতম। 

রাসেল আরও জানান, শীতকালে ফুল চাষে ব্যাপক লাভ। সামনে ২১ ফেব্রুয়ারি আসছে। তখন এসব ফুল বাজারে তুললে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। 

স্থানীয় সিদ্দিক নার্সারির মালিক সিদ্দিক বলেন, আমার নার্সারি কয়েকবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নার্সারির পুরস্কার পেয়েছে। যে কোনো বেকার ছেলে ফুল চাষে এগিয়ে আসলে স্বাবলম্বী হতে পারবে। 

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে জানান, জেলায় অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি ফুল চাষ একটি লাভজনক পেশা। যদি কেউ ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের কাছে আসে, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি বেকার বা দরিদ্রতার কারনে তারা যেন সহজভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ পায় সে ব্যবস্থা জেলা কৃষি অধিদপ্তর করে দেবে।

জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর