শুঁটকি রপ্তানি বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের শুঁটকিপল্লী
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের মিঠাপানির শুঁটকির খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। প্রতি বছর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এ সকল শুঁটকি। কিন্তু করোনার প্রভাবে আটকে গেছে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি। এতে বিপাকে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কালী নদীর পাড়ঘেঁষা গ্রাম দাসপাড়া। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষের আদি ব্যবসা মাছ ও শুঁটকি ব্যবসা। বর্তমানে এ ব্যবসায় জড়িয়ে আছে প্রায় ২শ থেকে ৩শ পরিবার।
বিজ্ঞাপন
কালী নদীর পাড়ঘেঁষা শতাধিক মাচায় প্রতিদিন গজার, বোয়াল, শোল, আইড়, বাইম, পুঁটি ও ট্যাংরা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। তারপর এ সকল শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে শুঁটকি রপ্তানি না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। আর ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন মহাজনরাও। করোনার কারণে বিক্রি না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ হাজার লোক।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত শুঁটকি নষ্ট হওয়ায় মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা দেওয়ারও অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
কালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ছোট বড় মিলে প্রায় ১৭৫টি শুঁটকি তৈরির ডাঙ্গি (বাঁশের তৈরি মাচা)। একেকটি ডাঙ্গিতে প্রায় ৫০ থেকে শতাধিক শ্রমিক কাজ করে থাকে। এ সকল ডাঙ্গিতে বছরে প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা।
এ শুঁটকি পল্লীতে বেশির ভাগই চ্যাপা পুঁটি মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। যা ভারতে একচেটিয়া বাজার দখল করেছে। এছাড়ও কাঁচকি, বোয়াল, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিয়েও শুঁটকি তৈরি করা হয়। এ শুঁটকি দেশের বাজার ছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হয়। করোনার কারণে এখন আর রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
শুঁটকি ব্যবসায়ী তপন কুমার জানান, করোনার কারণে ব্যবসায়ে বিপর্যয় হয়েছে। শুঁটকি বেছে টাকা পাচ্ছি না। টাকা ধার করে শুঁটকির কাঁচামাল কিনতে হচ্ছে। সরকার আমাদের সাহায্য করে না।
শুঁটকি ব্যবসায়ী সুবীর মল্লিক জানান, ৬০ লাখ টাকার শুঁটকির মধ্যে মাত্র ৩৫ লাখ টাকার বিক্রি করেছি। করোনার কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী নির্মল চন্দ্র মন্ডল জানান, সুদের ওপর টাকা নিয়ে আমরা কাঁচামাল কিনি। করোনার কারণে এই জিনিসগুলো বিক্রি করতে পারছি না। খুব বিপদে আছি।
কুলিয়ারচরের শুঁটকি দেশের সীমানা ছেড়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, ইতালি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। করোনার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে শুঁটকি রপ্তানি। বিশেষ করে পুঁটি মাছের শুঁটকি ভারতে যেত সেটাও এখন বন্ধ। সরকার যদি বিনা সুদে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় তাহলে শুঁটকি পল্লীর পাঁচ হাজার পরিবার বেঁচে যেত।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস, সভাপতি, কুলিয়ারচর সততা শুঁটকি সমিতি
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছির মিয়া বলেন, শুঁটকি শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে পারলে এ শিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এজন্য সরকারিভাবে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হবে ও ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুঁটকি উৎপাদনকারীদের একটা তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে নতুন একটি প্রকল্প প্রণয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।
এসকে রাসেল/এসপি