বয়সের কোটা ৮০ পেরিয়েছে আব্দুস সামাদের। হাঁটতে পারেন না ঠিকমতো। পথ চলতে হয় লাঠিতে ভর দিয়ে। ঝাপসা দেখেন চোখেও। তবুও ঘরে বসে থাকার লোক নন তিনি। কেননা এলাকায় যে চলছে ভোটাভুটি। তাইতো সকালের নাস্তা সেরেই ভাতিজাকে নিয়ে চলে এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। 

ভোট উৎসবে নিজেকে সামিল করতে পেরে তৃপ্তির হাসি সামাদের মুখে। বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমল থেইক্যাই (থেকে) ভোট দিয়া আইতাছি। কোনোবারও বাদ দেইনি। বয়স অইছে এইডা ঠিক তয়, ভোট আইলে বাড়িত বইয়া থাহার (থাকতে) পাই না। নিজের ভোটটা দিয়া অহন ভালা লাগতাছে।’

রোববার (২৮ নভেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের ৯৮ নং কাঁচাচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের বাইরে কথা হচ্ছিল আব্দুস সামাদের সঙ্গে। এ সময় তার পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন গুজিয়াম কাঁচাচড়া গ্রামের বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ। লাঠিতে ভর দিয়ে একা একাই আসছিলেন ভোট দিয়ে। সামাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ করেই কথা হয় বুলবুলের সঙ্গে। জানা গেল, তিন বছর আগে স্ট্রোক করার পর অবশ হয়ে যায় বাম পাশের হাত-পা। তারপর থেকে চলতে হয় অন্যের সাহায্য নিয়ে। বছর খানেক ধরে লাঠিতে ভর দিয়ে একা একা হাঁটাচলার চেষ্টা করছেন তিনি। 

এই অবস্থায় কেন ভোটকেন্দ্রে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বুলবুলের সরল উত্তর, ভোট আইলে ঈদ ঈদ লাগে বাবা। আগিলা (আগের) দিনের কতা মনে পইরা যায়। কত আনন্দ করছি এই নির্বাচন আইলে। আমি নৌকারে মেলা ভালোবাসি, এই ভালোবাসা থেইক্যাই সকাল সকাল ভোট দিবার আইয়া পরছি।

উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে সামাদ-বুলবুলের মতোই তৃপ্তির আভা ছড়িয়েছেন অন্যান্য ভোটাররাও। সকাল থেকেই ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল কেন্দ্রটিতে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি রয়েছে চোখে পড়ার মতো। সময় যত গড়াচ্ছে ততই দীর্ঘ হচ্ছে ভোটারের সারি। 

ষাটোর্ধ্ব রাশিদা বেগম বলেন, ভোটাররা বাড়ি বাড়ি গেছে। হেগরে (তাদের) কথা দিছি ভোট দিমু। হেলেইগ্যাই ভোট দিবার আইছি। আশা করি পরে তারাও আঙ্গর কতা ভাববো। এলাকার উন্নয়ন করবো। 

কাঁচাচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছে তিন হাজার পাঁচজন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৪৭ জন ও নারী ১ হাজার ৪৫৮ জন।  

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল, মুক্তাগাছা ও সদর উপজেলার ২৭ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ টানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। 

তিন উপজেলার ২৭ ইউনিয়নে ১৮২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৯৬টি ভোটকেন্দ্রে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকারের সুযোগ পাচ্ছেন। যেখানে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৩ জন ও নারী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৬ জন। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার বলেন, নির্বাচনে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রার্থীরা যে দলেরই হোক না কেন, প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি রয়েছে।  

জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে আনসার, পুলিশ, র‌্যাব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছে। 

এসপি