রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২২১ শিশু

রংপুরে জেঁকে বসেছে মাঘের শীত। বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২২১ শিশু। যেখানে শয্যা সংখ্যা প্রায় শতাধিক। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে সাতদিনে ১৯ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

২১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি এক হাজার ২২১ রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৩৪ জন। কিছুটা সুস্থ হয়ে স্বেচ্ছায় চলে গেছে ২০৭ জন এবং ৪৯ জন অন্যত্র বদলি হয়েছে। গুরুতর আক্রান্ত শিশু ও নবজাতকের মধ্যে মারা গেছে ১৯ জন।

প্রতিদিনই বাড়ছে রংপুর হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগীর সংখ্যা

তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে রমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সেবা) মোসলেমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু শীতজনিত রোগে এসব শিশুর মৃত্যু হয়নি। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অপরিপক্ক ও কম ওজনের নবজাতক এবং জন্মের সময় মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত শীতকালে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসা।

শিশু ওয়ার্ডে নবজাতকসহ শিশুর স্বাভাবিক মৃত্যুর হার অনেক কম। সপ্তাহে কখনো সাত-আটজনের মৃত্যু হয়। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে অন্যান্য রোগে শিশুমৃত্যুর হার একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতজনিত কারণে শিশু রোগী প্রতি বছরের মতো এবারও বেড়েছে।

মোসলেমা খাতুন, তত্ত্বাবধায়ক (সেবা), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে রোগীদের ভিড়। প্রতি শয্যায় মায়েরা সন্তান নিয়ে বসে আছেন। কোনো শয্যায় দুজন, কোথাও তিনজন। মেঝেতে বসে আছেন কেউ কেউ। অনেকে সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও রোগীদের চাপ

শিশু বিভাগ সূত্র জানায়, দুটি শিশু ওয়ার্ডে ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের বয়স একদিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। শীতের আগে এই ওয়ার্ডে এভাবে এত রোগী থাকতে দেখা যায়নি বলে চিকিৎসক ও নার্সরা জানান। শীত যতই বাড়ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নবজাতকদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানি দেখা দেয়। এ সময়ে শীতজনিত রোগ ছাড়াও নবজাতকের ক্ষেত্রে অপরিপক্ব ও কম ওজনের শিশুও ভর্তি হয়। তাদের উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা উষ্ণতা পায় না। এজন্য মায়েদের এই সময়টা বেশি সচেতন ও সতর্ক হওয়া দরকার।

পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুরের পূর্ব পরান এলাকা থেকে অসুস্থ শিশুসন্তানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন স্বজনেরা। জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় তাদের একজনের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে শিশুর স্বজন আতিয়ার রহমান বলেন, ‌‘কাইল ভাইয়ের ছোট ব্যাটাটা কাশ সর্দিতে দম নেবার পাওছে না। অবস্থা খুবই খারাপ। এই জনতে মেডিকেলেত নিয়্যা আসছি।’

শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ ১৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন

অন্যদিকে শীত নিবারণে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে  জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত ভর্তি হওয়া পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ ১৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কারও কারও শরীরের ৮০ শতাংশ, আবার কারও শরীরের ৪০ ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম