বিয়ের তথ্য গোপনে চাকরি, ফেঁসে যাচ্ছেন এসআই
বিয়ের তথ্য গোপন রেখে চাকরিতে যোগদানকারী রাজশাহী জেলা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান ফেঁসে যাচ্ছেন। প্রথম স্ত্রী রেবেকা সুলতানা মনির দেয়া লিখিত অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তিনি।
আনিছুর রহমান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের উত্তর শান্তিরাম এলাকার মৃত রিয়াজুল হকের ছেলে। রাজশাহীর তানোর থানায় কর্মরত তিনি। তার পরিচিতি নম্বর বিপি-৯১১৯২২৩৭০৯।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, পরিবারের সম্মতিতে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা সদরের রুপারবাজারের উত্তর ঘাগোয়া কাটিহারা এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে রেবেকা সুলতানা মনিকে বিয়ে করেন আনিছুর। ২০১৮ সালে পুলিশ বাহিনীতে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আনিছুর রহমান। ট্রেনিং শেষে ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় এসআই পদে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদানের পর আনিছুর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থানার পাঙ্গাসি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য কুলছুম খাতুনের মেয়ে বৃষ্টি খাতুনকে (২২) দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন আনিছুর। এরপর বাসাভাড়া নিয়ে তাকে ঢাকায় রেখেছেন আনিছুর। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেননি এই এসআই। এতোদিন কৌশলে দুই স্ত্রীর সঙ্গেই যোগাযোগ বজায় রাখছিলেন। তবে সম্প্রতি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় প্রথম স্ত্রী মনির সন্দেহ হয়। এরই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানতে পারেন প্রথম স্ত্রী মনি।
এরপর দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে আসার শর্তে প্রথম স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এসআই আনিছুর। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পড়াশোনা খরচ, পুলিশে চাকরি, ট্রেনিং, বাইক কেনাসহ পাঁচ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন আনিছুর।
এনিয়ে গত ২৫ অক্টোবর রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন আনিছুরের প্রথম স্ত্রী মনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম স্ত্রীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেন এসআই। ভুক্তভোগী গৃহবধূর ভাষ্য, তার ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন আনিছুর।
তাছাড়া তিনি যে কোচিং সেন্টারের ছাত্রী ছিলেন, সেখানকার শিক্ষক ছিলেন আনিছুর। বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে তিনি সম্মতি দেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটা করে তাদের বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বসবাস করেন। ২০১৬ সালে তিনি গর্ভধারণ করেন। ওই সময় জোরপূর্বক তার গর্ভপাত ঘটান আনিছুর। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ওই সময় তাকে হাসপাতালেও নেয়া হয়। স্বামী সংসারের কথা ভেবে সবকিছু তিনি মানিয়ে নেন। সবমিলিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুখেই সংসার করেন মনি।
মনি বলেন, আনিছুর তাকে জানিয়েছিলেন পুলিশ বিভাগের অনুমতি নিয়ে তিনি আবার বিয়ে করবেন। ততোদিন বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। তিনি স্বামীর কথা রেখেছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমাতে থাকেন স্বামী। বিয়ের ৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভাগের অনুমতির অপেক্ষায় থাকার কথাও জানান তিনি। কিন্তু তার আগেই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর আসে। তার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেয়ায় এখন অনবরত হুমকি আসছে। অভিযোগ তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী) আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রায় শেষের পথে। খুব শিগগিরিই তিনি জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন দেবেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে বিষয়টি গোপনীয় উল্লেখ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তবে জেলা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এতে এসআই আনিছুরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ আসছে।
এ বিষয়ে এসআই আনিছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এমএসআর