মুক্তিযুদ্ধকালে চাঁদপুর শহরের বধ্যভূমি বড়স্টেশন মোলহেডে এক এক করে নারী-পুরুষদের ধরে নিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের বীভৎস অত্যাচারে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। আটক নারীদের ধর্ষণ করে লোহার সাঁড়াশি দিয়ে এক এক করে হাতের আঙুলের নখ তুলে ফেলে তারা। বাতাসে ভেসে আসে বন্দীদের আর্তচিৎকার। বীভৎস অত্যাচারের পর হত্যা করা হয় সবাইকে। পুরো বড়স্টেশন লাশের স্তূপে পরিণত হয়। গলিত অর্ধগলিত এসব লাশ ফেলে দেওয়া হয় ডাকাতিয়া ও মেঘনার ঘূর্ণিপাকে। 

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রাতে শহরের বড়স্টেশন মোলহেডে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মধ্যরাতের মোলহেড’ নাটক মঞ্চায়িত করা হয়েছে।  এই নাটকে মুক্তিযুদ্ধকালের সেই সব বীভৎসতা তুলে ধরা হয়েছে।   

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেশব্যাপী মঞ্চায়িত হচ্ছে ‘গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার’। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার চাঁদপুরে ‘মধ্যরাতের মোলহেড’ নাটক মঞ্চায়িত করা হয়। 

মধ্যরাতের মোলহেড নাটকের নাট্যকার, নির্দেশক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা একাত্তরের মোলহেডের সেই বীভৎসতা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন। ১৯২১ সালে ১০০ বছর আগে আরেকটি গণহত্যা এখানে হয়েছিল। ৩০ হাজার চা শ্রমিককে এখানে গলা কেটে হত্যা করেছিল ব্রিটিশরা।

নাটক শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। 

এ সময় তিনি বলেন, মোলহেড চাঁদপুরের অনিন্দ্য সুন্দর একটি স্থান। কিন্তু মোলহেডে চাঁদপুরের অনেক মানুষের স্মৃতি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মোলহেডে নারীদের ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। সেই দুঃসহ স্মৃতি চাঁদপুরের অনেক পরিবার বহন করে চলেছে। শুধু চাঁদপুরেই নয় সারাদেশে অসংখ্য বধ্যভূমি রয়েছে। যেখানে অসংখ্য নির্যাতন হয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে। সঠিক ভবিষ্যৎ গড়তে সঠিক ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। 

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ। এ সময় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উপ-পরিচালক মো. শামিম, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান,  স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ও অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি শহিদ পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চাঁদপুর জেলা কালচারাল অফিসার মো. আয়াজ মাবুদ।

শরীফুল ইসলাম/আরএআর