বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খালের ওপর দুটি ভবন তুলছিলেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে অবৈধ সেই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছে পবা উপজেলা প্রশাসন। ভবন ভাঙায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন। 

তিনি জানান, ভবন উচ্ছেদে গত ১০ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসে। এরপর মেয়রকে ৩০ দিন আগে উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে ভবন দুটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে বছরখানেক আগে কাটাখালী পৌরসভার ভেতর দিয়ে যাওয়া খাল ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্খনন করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গত এপ্রিলে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সরকারি খালের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে খালের ওপর প্রায় ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুট জায়গাজুড়ে মেয়র আব্বাস আলী ভবন নির্মাণ শুরু করেন। তিন তলা ভবনটির ইতোমধ্যে দুই তলা ভবন উঠে গেছে। এই ভবনের ২১টি দোকান হওয়ার কথা ছিল। ব্রিজের উত্তর পাশে খালের ওপর আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটির কাঠামো দুই তলা উঠে গেছে। এই ভবনে ৬টি দোকান হওয়ার কথা ছিল।

পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলরের অভিযোগের ভিত্তিতে গত আগস্টে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। 

এরপর কয়েক দিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে আবার জোরেশোরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিষয়টা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

গত ২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথা বলতে শোনা গেছে মেয়র আব্বাস আলীকে।

এই ঘটনায় ২৩ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে আরএমপির তিন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি অভিযোগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় দায়ের করা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মোমিনের অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়।

আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বুধবার (১ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানী ঢাকার ঈশা খাঁ হোটেল থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। পরে তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। সেই মামলায় মেয়র আব্বাস আলী ২ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ২৪ নভেম্বর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে মেয়র আব্বাসকে অপসারণের করে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। এর দুই দিন পর ২৬ নভেম্বর তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেয় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।

মেয়র আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন।

২০২০ সালের ডিসেম্বরেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে গত ২৫ নভেম্বর রাতে পৌরসভার ১২ কাউন্সিলর তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। আটক হওয়ায় মেয়র পদও হারাতে পারেন মেয়র আব্বাস। 

 ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর