জরাজীর্ণ ঘর। তাতেই সংগ্রাম করে জীবন কাটছে দিনমজুর মহিন উদ্দিনের। সংসারে মা খায়রুন নেছা, বোন সুমি আক্তার ও রুনা আক্তার রয়েছে। এ ঘরের জন্য দুই বোনের বিয়ে দিতে পারছেন না। নিজেও বিয়ে করতে পারেননি। সামান্য উপার্জন দিয়ে তিন বেলা তিন মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করাই দুঃসাধ্য। সেখানে শখ পূরণ করার কথা মাথাতেই আসে না। একটি ঘর আর বোনদের বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। ঢাকা পোস্টের কাছে নিজের দুঃখের কথা এমনভাবেই উপস্থাপন করেছেন মহিন।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবিরনগর গ্রামের বাসিন্দা মহিন। পেশায় একজন টিউবওয়েল শ্রমিক। তবে তার এ কাজ সবসময় থাকে না। ফলে প্রায়ই ক্ষেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করতে হয় তাকে।

জানা গেছে, প্রায় ১৩ বছর আগে মহিনের বাবা হেদায়েত উল্যা মারা যান। বোনরা তখন ছোট ছিল। বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। দুই কক্ষের একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘরে মা ও বোনদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তার। বর্ষায় আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে আর জ্যোৎস্না রাতে ঘরে উঁকি দেয় চাঁদ।

এদিকে বোনদের বয়স বাড়ছে, সেই সঙ্গে মহিনেরও। বোনদের বিয়ের সম্বন্ধ এলেও ভাঙা ঘর দেখে পাত্রপক্ষ সম্মতি দেয় না। এতে নিজের বিয়ের ইচ্ছাও আটকে আছে। বোনদের বিয়ে দিতে পারলেই নিজে বিয়ে করবেন বলে জানান মহিন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ঘর পাওয়া হলো না তাদের।  

মহিনের প্রতিবেশী মো. মোস্তফা, মামুন হোসেন ও শিমু আক্তার জানায়, মহিন খুব ছোটবেলা থেকেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। মা-বোনদের নিয়ে তাকে খুব কষ্ট করতে হয়। কারণ সংসারে উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই। একটি ঘর হলে বোনদের বিয়ে দিতে পারবে। সরকারি ঘর কিংবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় কেউ যদি একটি ঘর করে দিত তাহলে তাদের জন্য অনেক বড় উপকার হতো।

মহিনের মা খায়রুন নেছা বলেন, আমগো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। ভাঙা ঘরে দুঃখ-কষ্টে দিন চলে যায়। উপযুক্ত বয়স হলেও এখনও মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছি না। বিয়েতে ঘরটিই অভিশাপ হিসেবে তাড়া করছে তাদের।

মহিন উদ্দিন বলেন, টিউবওয়েল স্থাপন করেই আমার উপার্জন করতে হয়। কিন্তু এ কাজ সব সময় থাকে না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে আমি ছাড়া উপার্জন করার মতো কেউ নেই। তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতেও কষ্ট হয়ে পড়ে। এতে টাকা-পয়সা জমানো কিংবা বাড়তি কোনো শখ পূরণ কখনও করতে পারিনি। সরকার কতজনকে ঘর দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের কপালে একটি ঘর জুটল না। এ ঘরের জন্যই দুই বোনকে এখনও বিয়ে দিতে পারিনি। নিজে বিয়ে করব, সেটাও আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হয়।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমি ওই বাড়িতে যাব। মহিনের ঘর পরিদর্শন করে সহযোগিতা করা হবে।

মহিন উদ্দিনকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে 01757183911 এই নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি এই নম্বরে 01824911460 (বিকাশ) করতে পারেন।

এসপি