বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে দু-দিন ধরে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসও বয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় এ জেলার ওপর দিয়ে। এদিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও গুমোট আবহাওয়ার কারণে আশঙ্কা বিরাজ করছে উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে।
এদিকে শীত ও বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলো উপকূলে ফিরে এসেছে। বেশ কিছু নৌযান সুন্দরবনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরের সব কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাত হোসেন।
বিজ্ঞাপন
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আঘাত হানলে করণীয় বিষয়ে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জাওয়াদ সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসক বলেন, টানা বৃষ্টির সঙ্গেও শীতেরও তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরুরি সভা করে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব থেকে মোকাবিলায় সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার রিকশাচালক আফজাল শেখ বলেন, গতকালকেও তেমন আয় করতে পারিনি। রাতভর ঝড়ের আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ঝড় হয়নি। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে সারাক্ষণ। আজকেও আয় না করতে পারলে পরিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার ভ্যানচালক শাহজামাল বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারণে সারাদিন ভ্যান চালাতে পারিনি। ঝড়-বৃষ্টি সব কিছুতেই আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। জাওয়াদের কথা শোনার পর থেকেই ভয়ে আছি।
বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের পাশে সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী রাজিয়া বেগম বলেন, একে শীত তারপরে সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের কথা শুনতেছি। কী হবে আল্লাহই ভালো জানে।
রামপাল উপজেলার মৎস্য চাষি নাজমুল শেখ জানান, নিচু এলাকায় আমাদের ঘের। দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। পানি ঘেরের পাড় পানি ছুঁই ছুঁই। এমন বৃষ্টি হতে থাকলে ঘের তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছি।
চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর বিলে ধান লাগানো কৃষক রত্না বৈরাগী বলেন, অনেক টাকা ধার নিয়ে ধান রোপণ করেছি। কিন্তু এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।
ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা জেলে ইউনুস আলী বলেন, খবর শুনে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে সকালে লোকালয়ে চলে এসেছি। অন্যান্য জেলেরাও লোকালয়ে আসা শুরু করেছেন।
মোংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরের সকল কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজ আসতেছে, যাচ্ছে। পণ্যবোঝাই ও খালাসও চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের খবর পাওয়ার পর থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করছি। তবে ঝড়টি গতি পরিবর্তন করে উত্তর দিকে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী ঝড়টি নিম্নচাপে রুপ নিয়েছে। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ উপকূলে আসার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটি সোমবার মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে দেশের বেশিরভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে।
তানজীম আহমেদ/এমএসআর