ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অব্যাহত বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবনের চারটি চরের দুই কোটি টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন ক্ষতির মুখে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।

বৃষ্টি না কমলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।

সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝের চর, নারকেলবাড়িয়া ও শেওলার চর এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুঁটকি আহরণ করছেন। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় পাঁচ দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে শুঁটকিপল্লিতে জেলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

‘পাঁচ দিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি, সাগরে নামতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে শুঁটকিপল্লিতে আসার জন্য করা ঋণের টাকাই শোধ করতে পারব না, লাভ তো দূরে থাক, খরচও ওঠে না।’ মুঠোফোনে হতাশা প্রকাশ করেন জেলে আজাদ শেখ। 

তিনি আরও বলেন, আমরা মোট ১৮ জন জেলে এসেছি এই চরে শুঁটকি আহরণ করতে। বছরের প্রায় পাঁচ মাস সাগরে অবস্থান করি। এই সময়ের আয়ে আমাদের সারা বছর চলে। কিন্তু হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

সুন্দরবনের আলোর কোল শুঁটকিপল্লি থেকে মুঠোফোনে ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুঁটকির মাচা ছুঁই ছুঁই পানি হয়েছে। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে চরের অসংখ্য মাচার শুঁটকি। আমার প্রায় ৭ লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাত দিন ধরে আমার ২৬ জন জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না। গত বছর করোনার কারণে ২৫ লাখ টাকার লোকসান গুনেছি। এবার শুরুতেই ক্ষতির মুখে পড়লাম।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে রোববার থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্য প্রাণী ও গাছপালার ক্ষতি না হলেও শুঁটকিপল্লির বেশ ক্ষতি হয়েছে।

জেলেদের তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণে প্রায় দুই কোটি টাকার শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে চরগুলোতে। ফলে রাজস্ব আয়ও কমে আসবে। তবে মৌসুমের বাকি সময়গুলো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলেরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তানজীম আহমেদ/এনএ