অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার জন্য ছয় লাখ টাকা ঋণ করে ২০১৭ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া গ্রামে সোহান মিয়া। দুই বছর পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ছুটিতে গ্রামে আসেন। ছুটি কাটিয়ে আবার সৌদি আরব ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হলে বিদেশগামী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর যেতে পারেননি সোহান। তখনও তার ঋণের অর্ধেক টাকা শোধ করার বাকি ছিল।

অনেক চেষ্টা করেও কোনো চাকরি যোগাড় করতে পারেননি সোহান। পরবর্তীতে সংসার চালাতে নিজ এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতে শুরু করেন। এখন এ কাজ করেই মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। সোহানের মতো আরও অনেক বিদেশ ফেরতসহ বেকার যুবক ভাড়ায় মোটারসাইকেল চালিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন। নিজ এলাকায় মোটরসাইকেল চালিয়ে ভালো টাকা আয় করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নে ভাড়ায় চলছে মোটরসাইকেল। প্রত্যন্ত এ দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন। এর মধ্যে বিদেশ ফেরত রয়েছেন অন্তত ১৫ জন। নদী-হাওর বেষ্টিত অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। স্থানীয় ধামাউড়া, দুবাজাইল, রানীদিয়া, চরকাকুরিয়া, রাজাপুর, কাকুরিয়া, পরমানন্দপুর ও বড়ইছরাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সরু ও ভাঙা সড়কে চলাচলের জন্য অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল।

তাছাড়া সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে মোটরসাইকেলের ভাড়াও কম। দ্রুত সময়ের মধ্যে খুব সহজেই স্বল্প ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন যাত্রীরা। সেজন্য যাত্রীদের কাছে মোটরসাইকেলই এখন জনপ্রিয় বাহন। একটি মোটরসাইকেলে দুইজন করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। দূরত্ব অনুযায়ী জনপ্রতি ভাড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। একেকজন যুবক সব খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে।

মোটরসাইকেল চালক সোহান মিয়া বলেন, ‘করোনার কারণে বিদেশে ফেরত যেতে পারিনি। পরবর্তীতে একটি মোটরসাইকেল কিনে ভাড়ায় চালাতে শুরু করি। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাই। সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে ভালোভবেই সংসার চলছে’।

আরেক চালক জুবায়ের আহমেদ জানান, গ্রামের সরু ও ভাঙা সড়কে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেলই অন্যতম বাহন। যাত্রীরা যেমন স্বল্প ভাড়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন, তেমনি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে।

মোটরসাইকেল চালকদের সর্দার আবু লায়েছ বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন আমাদের মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। খুব সহজে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেলই বেছে নেন যাত্রীরা। এর মাধ্যমে আমাদের মতো অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন ভালোভাবেই পরিবার নিয়ে চলতে পারছি আমরা’।

পাকশিমুল ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলী জানান, হাটবাজারের জন্য তাদের অরুয়াইল বাজারে আসতে হয়। আগে বাজারে আসার জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হতো। এখন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল থাকায় খুব অল্প সময়েই বাজারে আসা যাচ্ছে। রাত-বিরাত যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে বেকার যুবকদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। নিজ এলাকাতেই তারা এখন ভালো টাকা উপার্জন করতে পারছেন। এছাড়া যাত্রীদের জন্যও সুবিধা হয়েছে। কারণ তারা স্বল্প ভাড়ায় খুব সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন’।

এসপি