ঝিনাইদহের মহেশপুরে মৃত্যুপথযাত্রী এক বাবার সামনে ছেলেকে নিজের মুখে জুতার বাড়ি মারতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে চার দিন পরে মারা গেছেন বাবা।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা পোস্টকে এ খবর নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ জানান, মহেশপুর হাসপাতালে মুমূর্ষু বাবার বেডের পাশে বসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে হোসাইন নামে এক কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করতে বলেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ। এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি ওই ভিডিওটি দেখেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে পা ধরে মাফ চাচ্ছেন হোসাইন নামে ওই আওয়ামী লীগ কর্মী। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পা থেকে জুতা খুলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। হোসাইনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশ পালনে কয়েকবার নিজের গালে আঘাত করেন হোসাইন। 

সম্পূর্ণ ঘটনাটি হাসপাতালের বেডে থাকা মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সামনেই ঘটে। সেখানে মা ফাতেমা খাতুন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুই করার ছিল না তার। ছেলেকে জুতাপেটা করতে দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। অমানবিক এই ঘটনটি ঘটেছে মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই ঘটনার পরপরই হোসাইনের বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর সদর হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানায়, হোসাইন এলাকায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক কর্মী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। ঢাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে আসেন তিনি।

হোসাইনের বোনের জামাই মোমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ পা থেকে জুতা খুলে হোসাইনকে নিজের গালে আঘাত করার নির্দেশ দেন। নিরুপায় হয়ে কাজটি করেন তিনি। এর আগে পা ধরে মাফও চায়।

তিনি আরও জানান, যখন ঘটনাটি ঘটে তখন হোসাইনের বাবা মৃত্যুশয্যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। সোমবার বিকেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বুধবার মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ফেসবুকে লেখালেখির সূত্র ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপাশের সঙ্গে হোসাইনের বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের সর্মথক তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাবা গিয়াস সরকারের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হোসাইন। পরে সেখানে আসেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশসহ কয়েকজন। হোসাইনকে সহজেই বাগে পেয়ে যান তারা। শাস্তি হিসেবে করেন জুতাপেটা।

এ ঘটনায় আরিফুজ্জামান বিপাশের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এসপি