সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে বরখাস্তের বিষয়টি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।

এর আগে ভোররাতের কোনো একসময়ে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটক থাকা অবস্থায় বাবলু সরদারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাবলু সরদার কোমরে থাকা তাগি (সুতা) দিয়ে হাজতখানার লোহার রডের সঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার দাবি করছে, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, দায়িত্বে অবহেলা ও গাফেলতির কারণে কর্তব্যরত এএসআই মো. সোহেল শেখ ও কনস্টেবল শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখস্ত করা হয়েছে। বাবলু সরদার (৫৫) দেবহাটা সদরের বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জুড়ন সরদারের ছেলে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে তাকে বাড়ি ফেন্সিডিলসহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

বাবলু সরদারের মেয়ে বাবুল সরদারের মেয়ে দেবহাটা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলপ্রার্থী সুলতানা মুন্নী জানায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৪/৫ জন লোক আমাদের বাড়িতে আসে। এ সময় তারা একজন নারী সোর্সকে ঘরের মধ্যে পাঠায়। ওই নারী কয়েক বোতল ফেনসিডিল ঘরের মধ্যে রেখে আসে।

পরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা আমার পিতাকে নিয়ে ঘরের মধ্যে যায় এবং ওই নারীর রেখে আসা ৪৫ বোতল ফেনসিডিলসহ পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর তাদের ঘর তল্লাশি করে ৩৫ হাজার টাকাও নিয়ে নেয় তারা। পরে তারা আমার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসে এবং তার কাছ থেকে ভিডিও করে নেয় যে, তারা কোনো টাকাপয়সা নেয়নি মর্মে। তাকে সেখান থেকে সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে এসে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে মুন্নী জানায়।

মুন্নি আরও জানায়, এরপর বাবার মৃত্যু হলে রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকালে আমার মাকে যেতে বলা হয়। খবর পেয়ে মা শাহানারা বেগম ও ভাবিকে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে গেলে জানানো হয়, আমার বাবার কোমরে থাকা তাগি (সুতা) দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াছিন আলম চৌধুরী জানান, শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী বাবলু সরদারকে বসন্তপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। এরপর তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল। রাতের কোনো একসময়ে ডিবি অফিসের গারদের মধ্যে গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সজিব খান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক ডিবি কার্যালয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় রাতে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

আকরামুল ইসলাম/এমএসআর