ছেলে আবু হোসেন ও বাবা আলহাজ আব্দুল হাকিম খান

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন বাবা-ছেলে। বাবা আলহাজ আব্দুল হাকিম খান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি এবার দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় হয়েছেন বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী। 

আর ছেলে আবু হোসেন পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। তিনি এবার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। একই ইউনিয়নে বাবা-ছেলের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় উপজেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি পাংশার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে যশাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু হোসেন। অপরদিকে আবু হোসেন খানের বাবা সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল হাকিম খান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল রোববার (১২ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাবা-ছেলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ডা. প্রভাষ সেন।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ হাকিম খান একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি দীর্ঘদিন যশাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ওই ইউনিয়নের একাধিক বার নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন। এবার নির্বাচনে দল থেকে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তার ছেলে আবু হোসেনকে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন।

এ বিষয়ে যশাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী বলেন, নির্বাচনে বাবা-ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা মহাবিপদে রয়েছি।  বাবা আওয়ামী লীগের নেতা, ছেলেও নেতা। বাবার পক্ষে গেলে ছেলের বকা শুনতে হয়। আর ছেলের পক্ষে গেলে বাবার বকা শুনতে হয়। বাবা-ছেলের লড়াইয়ের কারণে দেখা গেল তারা একজনও জিততে পারল না। এতে ইউনিয়নে নৌকা হেরে যেতে পারে।

বর্তমানে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হাজী আব্দুল হাকিম খানকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবা-ছেলের লড়াইয়ের কারণে এবারও হয়তো তিনি নির্বাচিত হবেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ আব্দুল হাকিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি। এলাকায় আমার ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে। সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে রয়েছে। তাই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণাকালে আমাকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ইউনিয়নে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তাই দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আসন্ন নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ হয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি তার মতো নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে কোনো হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে না।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ডা. প্রভাষ সেন ঢাকা পোস্টকে জানান, যশাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বাবা-ছেলে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গতকাল রোববার (১২ ডিসেম্বর) তাদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের দিন দুজনের মনোনয়নপত্রই বৈধ হয়। আগামী ১৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বাবা-ছেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না সেটি জানতে প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাংশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১০ জন, জাসদের ২ জন, জাকের পার্টির ১ জন ও স্বতন্ত্র ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৫ জানুয়ারি।

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর