যশোরের কেশবপুর উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারি চাকরিজীবী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আপত্তি আমলে না নিয়ে রোববার (১২ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলাউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার বজলুর রশীদ।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আপিল করেছেন নৌকার প্রার্থী গৌতম রায় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আয়ুব হোসেন।

তাদের দাবি, ২০১৮ সালের এক প্রজ্ঞাপনে যশোরের কেশবপুর পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে দর্শন বিষয়ের প্রভাষক পদে কর্মরত রয়েছেন মো. আলাউদ্দিন। তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকেও কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি যশোরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেশবপুর পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। বর্ণিত বিদ্যালয়টির নাম সংশোধন করে ‘কেশবপুর পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়’ যশোর নামে সরকারি করা হলো।

এরপর ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কেশবপুর পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেসরকারি আমলে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর ৪৩টি পদ আত্তীকরণ করা হয়। এই আত্তীকরণের তালিকায় আছেন দর্শন বিষয়ের প্রভাষক মো. আলাউদ্দিনও।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আইনের পরিচালনা ম্যানুয়েলের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২৬-এর ২-ঙ ধারায় বলা হয়েছে, প্রার্থী প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কর্মে লাভজনক সার্বক্ষণিক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

কেশবপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট আয়ুব হোসেন বলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আইন অনুসারে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে আপত্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আপত্তি আমলে নেননি। তাকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করেছি জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার বরাবর।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠান ও পদ আত্তীকরণ (সরকারি) হলেও ব্যক্তি হিসেবে এখনো আমার চাকরির গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এ জন্য প্রার্থী হয়েছি। রিটার্নিং অফিসার যাচাই-বাছাই করে আমার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বজলুর রশীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলাউদ্দিনের প্রার্থিতা নিয়ে আপত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু আপত্তির বিষয়ে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ দিতে না পারায় আলাউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে আপত্তি তোলা প্রার্থীরা জানিয়েছেন, আলাউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার সেসব প্রমাণপত্র আমলে নেননি।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি কলেজের প্রভাষক পদে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬ সালের নির্বাচনে কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. আলাউদ্দিন। এরপর ২০১৮ সালে তার কর্মরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হয়েছে। তিনি বর্তমানে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি কেশবপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

জাহিদ হাসান/এনএ