বাঙালির গৌরবান্বিত বিজয়ের স্বাদ অনুভবে সাভার সেজেছে অপুরূপ সাজে। চারদিকে চোখধাঁধানো বাতির বর্ণিল সাজে সজ্জিত বিভিন্ন স্থাপনাসহ সড়ক-মহাসড়ক। এমন সাজ সাজ রব জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে তাকাতেই মনে হবে শ্রদ্ধা নিতে যেন বুক পেতে আছেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।

দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে বিজয়ের স্বাদ পেতে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদকে। আর বিজয়ের এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বাঙালি জাতি। সে জন্য সাভার যেন আজ স্বপ্নপুরী।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে সাভারের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থাপনা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লাল সবুজ বাতিতে সাজানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বাহারি ফুল আর রংতুলির আঁচড়ে। নতুন প্রজন্ম নিচ্ছে বিজয়ের স্বাদ। রাতে অনেকে সন্তান নিয়ে এসেছেন স্মৃতিসৌধের সামনে। রাতের বিজয়মাখা সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে, সন্তানকে জানাতে বিজয়ের ইতিহাস।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান ফটকে অনেকই এসে ভিড় করেছেন, তুলেছেন ছবি। এমন একজন হলেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সারা দিন কাজ করি। সন্তানদের সময় দিতে পারি না। জানাতে পারি না যুদ্ধের ইতিহাস। তাই সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে স্মৃতিসৌধে সন্তানসহ চলে এলাম। আসলে এখানে না আসলে বিজয়ের স্বাদ নতুন প্রজন্ম বুঝতেই পারবে না। স্মৃতিসৌধের ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাহির থেকেই বোঝা যায় বিজয়ের স্বাদ। তবে সন্ধ্যার দৃশ্য আসলেই বিজয়ে মাখা।

অপরজন হাশেম আলী বলেন, আমি প্রতিবারই আসি। বিজয়ের স্বাদ নিতে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত থাকি। শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা আমাদের জন্য জীবন দিয়ে এমন বিজয় উপহার দিয়েছেন। তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। বিজয়ের স্বাদ গ্রামে পৌঁছে দিতে এবার একটু আগেভাগেই এসেছিলাম। ভিডিও কলে বাবা-মা ও ভাইবোনকে দেখিয়েছি। তারা আক্ষেপ করছিলেন আজ সাভারে থাকলে তারাও স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পারতেন।

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিদেশি কূটনৈতিকরা। এ জন্য ধোয়ামোছার কাজ, ফুল দিয়ে সাজানোর কাজসহ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সম্পন্ন করা হয়েছে আলোকসজ্জার কাজ। মোটকথা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি  প্রস্তুত।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। রাত থেকেই আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ঢাকা জেলা পুলিশের পাশাপাশি পোশাকে ও সাদাপোশাকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা করেন। পরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে স্মৃতিসৌধের ফটক আর শ্রদ্ধা জানাতে নামবে জনতার ঢল।

এনএ