নিহত মাহমুদুল হাসান আবির

নরসিংদীতে মাহমুদুল হাসান আবির (১৯) নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে চলন্ত ট্রাক থেকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে রোববার (১৯ ডিসেম্বর ) দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে নরসিংদী সরকারি কলেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।

নিহত মাহমুদুল হাসান আবির নরসিংদীর শিবপুরের আয়ুবপুর ইউনিয়নের বংশিরদিয়া গ্রামের মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে ও নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শহীদ মিনার এলাকায় তাকে চলন্ত ট্রাক থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। 

মানববন্ধনে জানানো হয়, এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন মাহমুদুল হাসান আবির। এক বছর আগে মাহমুদুল হাসান তার বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি কখনো ট্রাকের হেলপার, কখনো রাজমিস্ত্রি বা রং মিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। গত ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে কাউসার মিয়া নামে এক ট্রাকচালক তাকে মোবাইলে কল করে ডেকে নেন। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে লাথি মেরে চলন্ত ট্রাক থেকে ফেলে দেন। এতে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন মাহমুদুল হাসান। 

স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। পরে ওই রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ভোরে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে দুপুর ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আবিরের।  

মানববন্ধনে নিহত মাহমুদুল হাসানের মা পারভীন বেগম, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোন বৃষ্টি আক্তার ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ভাই মাহিন হাসান উপস্থিত ছিল। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় লোকজন ও মাহমুদুল হাসান আবির সহপাঠীসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

আবিরের সহপাঠীরা বলছেন, প্রথমে ঘটনাটিকে আমরা নিছক দুর্ঘটনা ভেবেছিলাম। কিন্তু পর দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা একটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পাই। পরে সন্ধ্যার দিকে এর ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখতে পাই, কাউসার মিয়া নামে ওই চালক সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে চলন্ত ট্রাক থেকে লাথি মেরে মাহমুদুল হাসানকে মহাসড়কে ফেলে দেন। এই সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের সংরক্ষণে আছে। দুটি পরীক্ষা দিয়েছিল মাহমুদুল হাসান আবির, বাকি চারটি পরীক্ষা সে দিতে পারলে না। 

আবিরের মা পারভীন বেগম বলেন, আমার ছেলেকে চলন্ত ট্রাক থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে শিবপুর থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। কিন্তু তারা আমার মামলা নেয়নি। বলেছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ ঘটনায় মামলা নেবে। আমরা চাই, পুলিশ মামলা নিয়ে বিষয়টি ভালো করে তদন্ত করুক এবং আসামিকে গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা নিক। 

জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ওই ছেলেটির মা কিন্তু রাজধানীর শাহবাগ থানায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলেন। ওই থানা থেকে আমাকে জানানো হলে আমিই দায়িত্ব নিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে নিহতের মা একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছি, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মামলা হবে। অথচ আজ তারা মানববন্ধন করে বলেছেন, আমরা নাকি মামলা নিচ্ছি না।

ওসি আরও বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। ক্যামেরা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরত্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। যেহেতু পুরো বিষয়টি পরিষ্কার না, তাই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয় তবে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে। 
 
রাকিবুল ইসলাম/আরএআর