পৌষের শীত জেঁকে বসেছে। শীতের সে আমেজেই মাদারীপুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পড়ে গেছে পিঠা বিক্রির ধুম। বিকেল হলেই মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন। সন্ধ্যা থেকেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে পিঠাবিক্রেতাদের ঘিরে। 

ভালো বেচাকেনায় খুশি বিক্রেতারাও। আবার শীতের মধ্যে গরম পিঠার স্বাদ নিতে পেরে সাধারণ মানুষও খুশি।

বিকেলের দিক থেকেই মাদারীপুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যায়- সারি সারি মাটির চুলা জ্বালানো, প্রতিটি চুলার ওপরে বসানো হয়েছে খোলা। একটু পর পর খোলার ঢাকনা তুলে কড়াইয়ে তুলে দিচ্ছেন চালের গুঁড়া গোলানো। ব্যাস কয়েক মিনিট রেখেই গরম গরম চিতই পিঠা নামিয়ে, প্লেট ধরিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে। প্লেটের একপাশে দেওয়া হচ্ছে যার যার পছন্দ মতো সরিষা ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও শুটকি ভর্তা।  

অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে ভালো লাভ হওয়ায় অনেকেই শীতের মৌসুমটাতে পিঠার ব্যবসা করেন। বিশেষ করে হরের কলেজ রোড, চৌরাস্তা, পুরান বাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, খাদগী, মস্তফাপুর, চরমুগরিয়াসহ প্রায় শতাধিক স্থানে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে দোকানগুলোতে। সন্ধ্যা হলেই বেড়ে যায় ক্রেতা সমাগম, যা রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে।

প্রতি পিস চিতই পিঠা বিক্রি হয় ৫ টাকায় এবং ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকায়। এতে একেকজন পিঠাবিক্রেতার দিনে আয় হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। পিঠা বিক্রেতারা প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ, আর্থিকভাবে খুবই অস্বচ্ছল। শীত মৌসুম এলেই তারা স্বল্পপুঁজি নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় পিঠা বিক্রি করে থাকে। এই পিঠা বিক্রি করেই শীতের তিন থেকে চার মাস তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

পিঠা ক্রেতা রাসেল হোসেন বলেন, বাসায়  পিঠা তৈরি করা এখন অনেক কষ্টকর। তাই বাজারের পিঠা তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে বাসায় যান।

অন্য আরেক ক্রেতা হাফিজ মিয়া জানান, চিতই পিঠা আমার খুব পছন্দ। শীতের ভেতর উনুনের পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।

পিঠা বিক্রেতা আলতাব হোসেন বলেন, শীতের মৌসুমে এলেই আমি পিঠা বিক্রি করে থাকি। অন্য মৌসুমে আমি দিন মজুরের কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা থাকে। গত বছরের চাইতে এবার চাল, লাকড়ির দাম অনেক বেশি তাই আগের মতো তেমন লাভ হয় না।

পিঠা বিক্রেতা শরীফা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর । সংসারের কিছুটা হাল ধরতে আমি পিঠা বিক্রি করি। তাছাড়া শীতে আমার স্বামীর তেমন কাজ থাকে না। তাই শীত এলেই আমরা পিঠা বিক্রি করি। 

নাজমুল মোড়ল/এনএফ