সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএম মনোয়ার হোসেন

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টিএম সোহেলকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় অবসরকালীন ভাতা (পেনশন) পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন একই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএম মনোয়ার হোসেন। অবসর গ্রহণের ১৩ মাস পার হলেও অবসরকালীন ভাতা পাচ্ছেন না তিনি।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকালে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় দৈনিক কলম সৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষও এসএম মনোয়ার হোসেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন একই কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসএম মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অবসর নেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাই। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন দায়িত্ব নেওয়া অধ্যক্ষ বরাবর না দাবি প্রত্যয়ন চেয়ে দরখাস্ত করি। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ আমার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। 

মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমি অবসর নিই। এরপর ১ জুলাই বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পেনশন সংক্রান্ত ফাইল জমা দিতে গেলে তিনি গ্রহণ করেননি। এরপর কয়েক দফায় পেনশন ফাইল জমা দেওয়ার চেষ্টা করলেও গ্রহণ করেননি এবং অফিসের অন্য কাউকে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। এর আগে না দাবি প্রত্যয়নের জন্য দফায় দফায় আবেদন করলেও নতুন অধ্যক্ষ টিএম সোহেল কোনো প্রত্যয়নপত্র দেননি। বাধ্য হয়ে আমি ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ডাকযোগে পেনশন সংক্রান্ত ফাইল অধ্যক্ষ বরাবর পাঠাই।

তারপরও অধ্যক্ষ সেটি আমলে নেননি। এভাবে আড়াই মাস চলে যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পেনশন ফাইল গ্রহণের জন্য অধ্যক্ষ বরাবর ডাকযোগে চিঠি পাঠাই। ওই চিঠি পাওয়ার পর ১৯ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ পেনশন আনুতোষিক নির্ধারণ ও মঞ্জুরির ফাইলটি অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে আমাকে পাল্টা চিঠি দেন। আমি ২৪ ডিসেম্বর ওই চিঠির যুক্তিপূর্ণ জবাব দিই। এরপর দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও আমার পেনশন ফাইলে কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না। এভাবে দফায় দফায় চিঠি, পাল্টা চিঠি দেওয়ার পরও পেনশন ফাইলটি মাউশিতে প্রেরণ করেননি অধ্যক্ষ। বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আইনজীবী শহীদুল ইসলামকে দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠাই।

নোটিশ পাওয়ার পর অবশেষে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পেনশনের ফাইলটি মাউশিতে পাঠান অধ্যক্ষ সোহেল। তবে ফাইলটি যাতে কোনো ক্রমেই পাস না হয় সে লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাঠান তিনি। সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অডিটের ব্রডশিট জবাব সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি।

এরপর মাউশির চাহিদার প্রেক্ষিতে অডিটের ১ বছর ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রডশিট জবাব পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে অনুচ্ছেদ ৩ পরিশিষ্ট ১ এর জবাবের প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টাকার পার্থক্য দেখিয়ে জবাব দিয়েছেন।

মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমার কাছে চাওয়া ৩০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় অধ্যক্ষ এসব করছেন। নিজের আস্থাভাজন দুজন শিক্ষককে দিয়ে আমার কাছে ঘুষের প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ সোহেল।

এ বিষয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভ্যন্তরীণ অডিট চলাকালীন সময়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ আমার কাছে এসে মনোয়ার স্যারের পেনশন ও অডিট নিষ্পত্তি করতে ৩০ লাখ টাকা অধ্যক্ষের টেবিলে রাখতে বলেছিলেন। 

তবে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক প্রভাত চন্দ্র দাস ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাক পোস্টকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই।

ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টিএম সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি যথাযথ নিয়মে মনোয়ার হোসেনের পেনশন সংক্রান্ত ফাইল ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাউশিতে পাঠিয়েছি। শুধু তাই নয়, আমি নিজেও চাই তিনি পাওনা টাকা পাক।

এখন বাকিটা মাউশির দায়িত্ব উল্লেখ করে অধ্যক্ষ টিএম সোহেল বলেন, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কে বা কারা আমার স্বাক্ষর জাল করে অডিট পাসের জন্য একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব অধিদপ্তরে পাঠিয়েছিলেন। পরে তাদের সন্দেহ হলে আমাকে জানান। পরে আমি দেখি স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এজন্য ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি জিডি করি।

শুভ কুমার ঘোষ/এএম