অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি মেহেরপুরে জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হতে চলেছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দোয়েল, কোয়েল, ঘুঘু, বাবুই ও চড়ুইসহ নাম না জানা সব পাখি। পরিবেশ বিপর্যয়, বন নিধন, কীটনাশকের অবাধ প্রয়োগ আর খাদ্য-সংকটের কারণে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সবুজ বনায়নে উঁচু গাছে বসবাসে অভ্যস্ত দোয়েল, কোয়েল, ঘুঘু, ময়না আর বুলবুলি। আগে ঘন বনে বাস করা এসব পাখির দেখা মিলত। কোকিলের কুহু ডাক আর কাটঠোকরার খটখট শব্দ শোনা যেত। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর ছিল গ্রামবাংলা। শালিক ফিঙে আর ইস্টিকুটুমের ঝগড়া ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এখন আর নেই সেসব চিত্র।

অবাধে বিচরণ করতে না পেরে এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বনবাদাড় উজাড় হওয়া, নতুন নতুন বনায়ন সৃষ্টি না হওয়া ও কীটনাশকের অবাধ প্রয়োগের কারণে এসব জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

এদিকে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব ও নিরাপদ বনাঞ্চল না থাকায় বিলুপ্ত হচ্ছে বানর, হনুমান কাঠবিড়ালি। খেতখামারে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খাবারের সন্ধ্যানে আসা পশুপাখির অকাল মৃত্যু হচ্ছে। তা ছাড়া প্রজননক্ষমতাও হারাচ্ছে। শিকারিরাও অবাধে শিকার করছে এসব পশুপাখি। তাই পাখি শিকার বন্ধের দাবি জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা।

শিক্ষার্থী উম্মে ফাতেমা বলেন, পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন পাখির নাম শোনা যায়। অথচ সেগুলো আর চোখে দেখা যায় না প্রকৃতিতে। এসব পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করাসহ পাখি শিকার বন্ধের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

পাখিপ্রেমী ফিরোজ হোসেন বলেন, জেলায় যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে, সেখানে কৃত্রিমতায় ভরপুর। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আধুনিক বনায়নের পরামর্শও দিয়েছেন পাখিপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে খেতখামারে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ বন্ধেরও দাবি জানান তারা।

মেহেরপুর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ক্লাবের নেতা মাজেদুল হক মানিক বলেন, আগে সব জায়গায় ঘন জঙ্গল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফল গাছ ছিল। সেসব গাছের ফল খেয়ে আবার শাখায় বাসা বাঁধত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় ও গাছ না লাগানোর কারণে পাখিরা খাবার সংকট ও বংশবিস্তার করতে পারছে না। ফলে জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হচ্ছে। পাখি রক্ষায় দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণের পরামর্শ দিলেন এই পাখিবিশারদ।

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক খোরশেদ আলী বলেন, উঁচু গাছ নিধন বন্ধ করা এবং বনাঞ্চল রক্ষা করার জন্য সরকারি উদ্যোগ জরুরি। মানুষের পাশাপাশি বন্য প্রাণীদের খাবারের কথা বিবেচনা করা হলে বন্য প্রাণীদের বংশবৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে আবাদি জমিতে কীটনাশকের অবাদ প্রয়োগ বন্ধ করলে বন্য প্রাণী রক্ষা পাবে।

বন বিভাগের কর্মকর্তা হামিম হায়দার বলেন, জেলায় যে পরিমাণ বনাঞ্চল রয়েছে, তা বণ্য প্রাণীদের জন্য খুবই কম। জেলায় রয়েছে মোট জমির ১৭ শতাংশ বনাঞ্চল। ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল হলে বণ্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে ভালো হয়। সে জন্য বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, মানুষ যেন বন্য প্রাণী শিকার না করতে পারে এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। আমরা মানুষকে সচেতনতার মধ্য দিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে মেহেরপুর জেলায় এখনো অনেক পশু পাখি রয়েছে, যা আমাদের প্রকৃতির সৌদর্যবর্ধনে ভূমিকা রাখে।

মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মমদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, জেলায় বন্য প্রাণীদের বিচরণভূমি হিসেবে ব্যবহারের অনেক জায়গা রয়েছে। আমরা শুধু সচেতন ও প্রাণী রক্ষায় বিবেচনা করলেই পশুপাখি রক্ষা পাবে। প্রতিটি বাড়িতে নিজ উদ্যোগে গাছ রোপণ করলে আপনার বাড়িটিই একসময় বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হয়ে উঠবে।

এনএ