সুনামগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের ১০ দিন পরও থানায় অভিযোগ জমা দিতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। থানা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ কারও কাছ থেকেই সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তরুণীর (১৮) পরিবার। তবে থানা পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তারা লিখিত কোনো অভিযোগ পায়নি।

এদিকে ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম এলাকায় ঘুরছেন বলে জানায় ভুক্তভোগীর পরিবার। রফিকুল ধর্মপাশার সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজিনগর গ্রামের মৃত লালু মিয়ার ছেলে। 

ধর্মপাশা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, শুনেছি এক প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে এলে ভুক্তভোগীর পরিবার যেকোনো সময় অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঘরে প্রতিবন্ধী মেয়েকে রেখে পাশের বাড়িতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা এক তরুণীকে দেখতে যায় সবাই। এ সুযোগে পাশের গ্রামের রফিকুল ইসলাম তরুণীকে ধর্ষণ করে। পরে তরুণী পরিবারের সদস্যদের জানালে পাশের বাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের ডেকে আনা হয়। তখন তারা অভিযোগ নিয়ে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন থানায় গেলে আগে মেডিকেল রিপোর্ট আনতে হবে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশের পরামর্শে পরিবার লোকজন ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। ১৪ ডিসেম্বর এখানে মেয়েটির প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তিন দিন ভর্তির পর ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ১৮ ডিসেম্বর রিপোর্ট দেওয়ার কথা জানায় তারা। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (২২ ডিসেম্বর, বুধবার বিকেল ৫টা) রিপোর্ট পায়নি তরুণীর পরিবার।

এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী তরুণীর বড় ভাই বলেন, ঘটনার দিন পুলিশ পাশের বাড়িতে ছিল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। থানায় যাওয়ার পর ওসি বলেন, ‘আগে মেডিকেল রিপোর্ট দিতে হবে।’ রিপোর্টের জন্য প্রথমে ধর্মপাশা হাসপাতালে নিয়ে যাই, ওখান থেকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে এসেও ঘুরছি, মেডিকেল রিপোর্ট পাইনি। কিন্তু ধর্ষক বহাল তবিয়তে ঘুরছেন এলাকায়।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. লিপিকা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

ডা. লিপিকা দাস বলেন, আমি এখন ছুটিতে আছি। রিপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা। কেন রিপোর্ট হচ্ছে না, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

সুনামগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ তাৎক্ষণিক গ্রহণ করবে পুলিশ। পরে ২২ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্টও নেওয়া যাবে। প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের স্পর্শকাতর অভিযোগ নিয়ে এভাবে গাফিলতি করা আইনসংগত নয়।

সাইদুর রহমান আসাদ/এনএ