সৌদি যাব বলে ফাইজারের টিকা নিয়ে ঢাকা থেকে অভিযান-১০ লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলাম। রাত আড়াইটার দিকে লঞ্চের একটা ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনটার দিকে শুয়ে পড়ি। তার ঠিক দুই মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দ শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসি। তারপর হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। এর পরপরই দেখি চারদিকে আগুন আর আগুন। এরই মধ্যে লঞ্চের ছাদ গরম হয়ে গেছে। জীবন রক্ষার্থে যে যেভাবে পারছে লঞ্চ থেকে বাইরে লাফিয়ে পড়ছে। আগুন দেখে বেঁচে ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে যিনি আমাকে বাড়ি ফেরার তৌফিক দিয়েছেন।

কথাগুলো বলছিলেন বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. আব্দুল্লাহ। তিনি ওই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন।

অভিযোগের সুরে আব্দুল্লাহ বলেন, লঞ্চের একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে কেরোসিন দিয়ে কর্তৃপক্ষ ওই ইঞ্জিনটি আবারও চালু করে। এর ৫-৭ মিনিট পরই বিকট শব্দে ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হয়ে লঞ্চে আগুন ধরে যায়। লঞ্চের যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য যতটুকু ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন তা ছিল না। আর ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হওয়ার পর কারেন্ট চলে যাওয়ায় অন্ধকারে যাত্রীরা আরও দিশেহারা হয়ে পড়ে। 

বরিশাল নৌ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি লিডার হুমায়ুন কবির জানান, ঘটনাস্থল থেকে মহিলা পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৩০টি মরদেহ উদ্ধার করে পাঠিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে আমরা লঞ্চের চারপাশে খোঁজ করছি যদি কিছু পাওয়া যায়। আমাদের উদ্ধারকারী স্পিডবোর্ড বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছে। রাত ৩টা থেকেই উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চের পাশে স্রোত বেশি থাকায় ডুবুরি দল এখন পর্যন্ত কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।

নৌ পুলিশ বরিশাল জোনের সিনিয়র এএসপি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সর্বশেষ ঘটনাস্থল থেকে তিরিশটি লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

আবীর হাসান/আরআই