বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন দেশের সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম মুক্ত বাংলাদেশের জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য নয়। আমাদের অধিকারগুলোকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য, হরণ করার জন্য যুদ্ধ করিনি। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম বহুদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যে আমরা বাস করব এজন্য। কিন্তু তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন নতুন একটি নাটক শুরু করেছে। সেটা হলো সংলাপ। সঙ-এর আলাপ। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলকে দাওয়াত করে বলছে, ‘আসুন আমরা একটি নতুন ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করি।’ নির্বাচন কমিশনতো কাজই করতে পারে না, যতক্ষণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের মানুষ চায় না। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা এমন হয়েছে যে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভর্তি পরীক্ষা হয়, সে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটে ৯৪ ভাগ ফেল করেছে। তাহলে পড়াশোনা কোথায় হচ্ছে। আজকে পড়াশোনার যে খরচ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া পড়াশোনা নেই। সব দখল করে নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আবেগ দিয়ে, স্লোগান দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায় না। আগে আমাদের সুশৃঙ্খলভাবে দল তৈরি করতে হবে। আমাদের মধ্যে যদি শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে যুদ্ধে জয় লাভ করা যাবে না।  আমাদেরকে বড় আন্দোলনের জন্য, কঠিন আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকারে তৈরি থাকতে হবে। জনগণকে সংগঠিত করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আজকের সংকট তো শুধু দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নয়, বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, এই সংকট সমস্ত জনগণের।

বিএনপি মহাসিচব বলেন, ক্রসফায়ার হয়েছে, গুম হয়েছে, সারাদেশে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলী ৮ বছর আগে গুম হয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি। তার মেয়ে এখনো ঘরের দরজা দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে, এই বুঝি তার বাবা ফিরে আসছেন। ঢাকায় সুমন, ইমন, সোহেলসহ অনেকেই আছেন সাড়ে চার বছর যাবৎ ঘরে ফিরে আসেননি। মায়ের বুক খালি হয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, বন্ধু তার বন্ধুকে হারিয়েছে। বোন তার ভাইকে হারিয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং তাদের অত্যাচার নির্যাতন চলছে। 

তিনি বলেন, আজকে চালের দাম ৭০ টাকা। যেখানে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা ছিল। বিনা পয়সায় সার দেওয়ার কথা ছিল। এখন তিনগুণ দাম বেশি দিয়ে সার কিনতে হয়। শিল্প কারখানার শ্রমিকরা যে বেতন পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। আজকে এই সরকারের আমলে যারা বড় লোক তারা আওয়ামী লীগ করে, আওয়ামী লীগের তোষামদি করে। আর সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমা আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পায় না, সরকারি হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা নেই, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে পকেট কেটে টাকা রাখা হচ্ছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন  জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহ্ উদ্দিন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম আজাদ, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সালাহ্ উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা ইসরাক হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, দফতরবিষয়ক সহ-সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, মো. মজিবুর রহমান প্রমুখ।

শিহাব খান/আরএআর