রংপুরে টানা কয়েকদিন ধরে বিকেলের পর থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। যদিও সকালে মেঘের কোলে রোদের মিষ্টি হাসিতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। তবে পৌষের বিকেলে উষ্ণতা পেতে কম-বেশি সবাই পড়ছেন গরম কাপড়। এই শীত মৌসুমে হতদরিদ্র মানুষদের মাঝে উষ্ণতার কাপড় বিতরণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ‘উই ফর দেম’। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি আয়োজন করেছে পিঠার মোড়কে উষ্ণতা শিরোনামে দুই দিনব্যাপী পিঠা মেলা।

শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরের কামাল কাছনা রোডে আইজিএস প্রাঙ্গণে পিঠা মেলার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। বড়দিনের সরকারি ছুটি আর পিঠা মেলার শেষ দিন ঘিরে সেখানে সব শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করেন। ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়া স্টল ঘুরে দেখে কেউ কেউ পছন্দের পিঠা খেয়েছেন, কেউ আবার প্যাকেট করে নিয়েছেন।  

গ্রামবাংলার মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য হিসেবে শীতে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে। আর শহুরে সমাজে সেই ঐতিহ্যের রীতিনীতিকে কিছুটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে উই ফর দেম। দুই দিনের জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের তৈরি করা হরেক রকমের পিঠায় সাজিয়েছেন প্রতিটি স্টল।

পিঠা বিক্রির টাকায় হতদরিদ্র অসহায় মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র এবং এতিমদের মাঝে একবেলার খাবার বিতরণের করবে উই ফর দেম। সঙ্গে করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে পিঠা মেলায় ছিল গান, নাচ, আবৃতি ও নাটক পরিবেশন।

পিঠা মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায় বাঙালি ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠা, মুকশুলি, মসুর পাকন, চিকেন পুলি, নারিকেল দুধ পুলি, নারিকেল পুলি, গোলাপ ফুল পিঠা, আলুর পাকন পিঠা, বিবিআনা পিঠা, নারিকেল বিস্কুট পিঠা, বো টাই পিঠা, তেল পিঠা, ডিম সুন্দরী পাটিসাপটা, পাটিসাপটা, আনারকলি, দুধসাগর এবং চিতই পিঠার সমাহার।  

১০টি স্টলে পিঠার সমাহার যেমন, তেমনি স্টলের নামেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। যেমন তারামন বিবি, সিমন্তী, জয়ন্তী, তরুণবালা, আলেয়া ভিবিডি, রমা চৌধুরী, নিবেদিতা, আশাতলা, প্রিয় ভাষিণী ও পানসি। এসব স্টল থেকে মেলায় আগত পথশিশুদের বিনামূল্যে বাহারি পিঠা খাওয়ানো হয়। শুধু পিঠাই নয় মেলায় ফুচকা স্টলের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল বিভিন্ন রকমের খেলনার পরসা।

মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে ছোট্ট শিশুরাও। স্টল ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে পিঠা খাওয়ার মজা উপভোগ করে তারা। পিঠা মেলায় প্রচুর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সমাগমে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আয়োজন সংগঠক উই ফর দেম।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জীবন ঘোষ ঢাকা পোস্টকে জানান, গত বছর শীতেও এমন আয়োজন করা হয়েছিল। ওই মেলার লভ্যাংশ থেকে সাড়ে ৬০০ অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে শীত নিবারণে কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও একই উদ্দেশ্যে এই পিঠা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সংগঠনের মেয়েরা নিজেরাই পিঠা তৈরি করেছেন। এতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে গেছে। মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবিক বিকাশও ঘটছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর