গরুর কষ্ট দেখে অটোরিকশায় ঘানি টানছেন সাত্তার
আব্দুর সাত্তার। বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি। বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ত্রিমোহনী বাজার এলাকায়। বাপ-দাদার পেশা ছিল ঘানি থেকে তেল করা। তিনিও ধরে রেখেছেন সেই পেশা। দীর্ঘ দিন ধরে গরু দিয়ে ঘানি টানলেও বয়সের ভার আর গরুর কষ্টের কথা ভেবে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টানার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তার ছেলে মাহাবুব।
জানা গেছে, গবাদিপশুর কষ্ট ও তেল উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে আব্দুর সাত্তারের ছেলে মাহাবুব আলম ইউটিউব দেখে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এতে ব্যবহার করেছেন অটোরিকশার ফ্রেম, চাকা, ব্যাটারি ও মোটর।
বিজ্ঞাপন
আব্দুর সাত্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ দেশি সরিষা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘানিতে ১০ কেজি সরিষা থেকে ৩ লিটার তেল উৎপাদন হয়। আগে তিন লিটার তেল গরুর ঘানিতে উৎপাদন করতে সময় লাগত ৩-৪ ঘণ্টা। এখন অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে ৩ লিটার তেল উৎপাদন করতে সময় লাগছে মাত্র দেড় থেকে ২ ঘণ্টা।
এ পদ্ধতির ব্যবহার করে একদিকে যেমন শারীরিক পরিশ্রম কমে এসেছে তেমনি তেল উৎপাদনের সময় কমে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে প্রতিদিন ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১০-১১ লিটার তেল উৎপাদন করছেন। আর উৎপাদিত প্রতি লিটার তেল খুচরা বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এতে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৮০০-৯০০ টাকা আয় করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
আব্দুর সাত্তারের ছেলে মাহাবুব আলম বলেন, আমি জন্মের পর থেকে দেখে আসছি বাবা খুবই কষ্ট করে। তার কষ্ট দেখে আমার খারাপ লাগত। দেখি বাবাও কষ্ট করে, গরুও কষ্ট করে। চিন্তা করতে থাকলাম কিভাবে বাবার কষ্ট দূর করা যায়? সেই চিন্তা থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তি দেখে তিনবার চেষ্টা করে অটোরিকশা দিয়ে তেল ভাঙতে সফল হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এখন অটোরিকশা দিয়ে ভালোভাবেই তেল ভাঙা যায়। অটোরিকশা রাতে চার্জ দিয়ে দিনে টানা ৯-১০ ঘণ্টা চালানো যায়। তেলে ঘানি টানতে যেভাবে গরু চারিদিকে ঘুরত ঠিক অটোরিকশার সুইচ অন করলেই গরুর মতো ঘুরতে থাকে। আগে গরু দিয়ে ৭-৮ ঘণ্টায় যে তেল উৎপাদন করতাম এখন ৩-৪ ঘণ্টায় হচ্ছে।
আব্দুর সাত্তার বলেন, তেলের ঘানি টানার পেশা আমার বাপ-দাদার। আমার বাবার মৃত্যুর পর আমিও এই পেশা বেছে নেই। তেলের ঘানি টেনেই জীবনটা শেষ করলাম। আমার ছেলে কোথায় দেখে অটোরিকশা দিয়ে তেল ভাঙার এই যন্ত্র আবিষ্কার করছে। এতে আমাকে আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। এখন শুধু সরিষা ডালায় দিলেই হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ১ নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য মন্তাজ আলী বলেন, আব্দুর সাত্তারের বাড়ি ছিল উলিপুর উপজেলায়। ২০-২৫ আগে আমাদের এখানে এসে বাড়ি করে। সে সময় খুবই অভাব ছিল তার। অভাব থাকার পরও কোনো রকম তেলের ঘানি টেনে সংসার চালাতো। দীর্ঘ দিন ঘানি টানার পর এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। সাত্তারের ছেলে দেখলাম নতুন পদ্ধতিতে অটোরিকশা দিয়ে তেল ভাঙছে। এখন তার পরিবার খুবই ভালো চলছে।
এসপি