বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার ১৬টি ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৬১ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। 

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি নেতা আরিফুজ্জামান অপু ও আসাদুজ্জামান মুরাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সদর থানা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান অপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৃণমূল এবং আমাদের পদত্যাগের তিনটি কারণ রয়েছে। যার প্রথমটি হচ্ছে খুলনা মহানগর বিএনপির যারা নেতৃত্ব দেয়, তাদের কেউ বর্তমান কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। দ্বিতীয়ত, নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলের জন্য সারাজীবন যে ত্যাগ এবং শ্রম দিয়ে আসছেন, তাকে মহানগর থেকে বিদায় দিলে সম্মানজনকভাবে দেওয়া উচিৎ ছিল। তৃতীয়ত, নজরুল ইসলাম মঞ্জু তো এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেননি, পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিলেন। তারপরও একটা মহল ভুল বুঝিয়ে তাকে ওই পদ (সাংগঠনিক সম্পাদক-খুলনা বিভাগ) থেকে অব্যাহতি দেওয়ায়েছে। এসব বিষয়ে সমাধান হলে আমরা আগের মতোই রাজনীতিতে ফিরে আসব।

সদর থানা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত সোনাডাঙ্গা থানা ও সদর থানার ৫৬১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। এখনও পদত্যাগের জন্য নেতাকর্মীরা আসছেন। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারা আঘাত পেয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন। অনেকেই কেঁদে ফেলেছেন। যা না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার হাজার হাজার নেতাকর্মী পদত্যাগ করবে। 

তিনি বলেন, মানুষ বলছে যে লোকটা তার জীবন-যৌবন সবকিছু বিএনপির জন্য বিসর্জন দিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীর জন্য জেলখানা, কোর্ট, হাসপাতাল থেকে শুরু করে কোন জায়গায় সেই লোকটা নাই। সে এমন কী অপরাধ করল যে দল থেকেই অব্যাহতি দিতে হবে?

আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, আমরাতো কমিটি পুনর্বিবেচনা চেয়েছি। ত্যাগী-পরীক্ষিত যারা মার খেয়েছে, পুলিশের হামলা-মামলায় জর্জরিত তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা পদত্যাগ করেছি। এরপর আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আরও অনেক কিছু চাইব। আশা করি তিনি কমিটির পুনর্বিবেচনা করবেন এবং আমাদেরকে দল করার সুযোগ করে দিবেন।  

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির উপদেষ্টা ইসতিয়াক উদ্দিন লাভলু, জাসাস আহবায়ক মেহেদী হাসান দিপু, মহানগর বিএনপির দফতর সম্পাদক মহিবুজ্জামান কচি, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বনি, সদর থানা বিএনপির যোগাযোগ সম্পাদক সেলিম বড় মিয়া, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল হোসেন খোকন, এস এম শাহজাহান, সাদিকুর রহমান সবুজ, শেখ শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ, ১৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি শেখ জামিরুল ইসলাম জামিল, সাধারণ সম্পাদক শেখ মোস্তফা কামাল, ১৭ নং ওয়ার্ডের সভাপতি শেখ ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহাগ, আব্দুল হাকিম, ১৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আলিম, ১৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি এস আকরাম হোসেন খোকন, সাধারণ সম্পাদক সরদার রবিউল ইসলাম রবি, ২০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন টারজান, ২৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান আরজু, ২৬ নং ওয়ার্ডের সিনিয়র সভাপতি শেখ মনিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আলম বাচ্চু, হেদায়েত হোসেন হেদু, কাজী নজরুল ইসলাম, মীর মোসলেহ উদ্দিন বাবর, সাংগঠনিক সম্পাদক ওহেদুজ্জামান অহিদ, লিটু পাটোয়ারী, তুষার আলম, শেখ মারিফ, মোস্তফা জামাল মিন্টু, মো. হুমায়ুন কবিরসহ ২৫০ নেতাকর্মী।

এ ছাড়া খুলনা সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল খান কালাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ হারুন মজনু, ২১ নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল উদ্দিন, ২৪ নং ওয়ার্ডের সভাপতি কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টু, সহ সভাপতি ওমর ফারুক ও ডা. আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ২৭ নং ওয়ার্ডের সভাপতি হাসান মেহেদী রিজভী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া লিটন, ২৮ নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইশহাক তালুকদার, সহ-সভাপতি মাসুদ খান বাদল, যুগ্ম-সম্পাদক শাহীন গাজী, ২৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মিজু, সিনিয়র সহ সভাপতি খান শহিদুল ইসলাম, সহ সভাপতি মো. আলী মিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ৩০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম খোকন, সহ সভাপতি গাজী শাহাদাৎ হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক মতিয়ার রহমান বুলেটসহ ৩১১ নেতাকর্মী।

এর আগে, শনিবার খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে এসএম আরিফুর রহমান মিঠুসহ খুলনার বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৬ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া অনেকেই ফেসবুকে পদত্যাগ করেছেন এমন পোস্ট দিয়েছেন।  

প্রসঙ্গত, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের (খুলনা বিভাগ) পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর জায়গায় অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ মিলন/আরআই